TMC Sahid Divas | রাত পোহালেই ২১ সে জুলাই! সভামঞ্চ ঘিরে থাকবে কড়া নিরাপত্তা! জানুন মঞ্চে কোথায় কে বসবেন, এই দিনের ইতিহাস!
আর কয়েক ঘন্টা পরেই ২১ সে জুলাই, তৃণমূলের শহীদ দিবস। রাজ্য জুড়ে দলের নেতা-কর্মীরা কলকাতায় আসতে শুরু করেছেন। সভামঞ্চের কাজ প্রায় শেষের দিকে। থাকছে কড়া নিরাপত্তা।
আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা, রাত পোহালেই ২১সে জুলাই, তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ দিবস (21st July, Martyr's Day of Trinamool Congress)। ইতিমধ্যেই ধর্মতলায় (Dharmatala) সভামঞ্চের কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এখন থেকেই গোটা রাজ্যের ভিন্ন জেলা থেকে কলকাতায় (Kolkata) আসতে শুরু করেছেন তৃণমূল সমর্থকরা। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছে ঘাসফুল শিবির। রাখা হচ্ছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে সভামঞ্চে।
২১ সে জুলাই উপলক্ষ্যে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা । Accommodation and Food Arrangements for Trinamool Leaders and Workers on The Occasion of 21st July :
২১ সে জুলাইয়ের জন্য রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। জানা গিয়েছে, মালদা এবং মুর্শিদাবাদের তৃণমূল কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে (Gitanjali Stadium)। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সমর্থকদের জন্য খাবারের মেনুতে থাকছে সয়াবিনের তরকারি আর ডিম, ভাত। উল্লেখ্য, গত কাল অর্থাৎ বুধবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সমর্থকদের জন্য করা ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) I
জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই দিনাজপুর ও দার্জিলিংয়ের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জন্য সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে (Central Park of Salt Lake) থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন ট্রেনে করে তৃণমূল নেতা কর্মীরা কলকাতায় আসা শুরু করেন। যার ফলে বেশ ভিড় দেখা যায় শিয়ালদহ স্টেশন (Sealdah Station) চত্বরে। একই ছবি দেখা গিয়েছে হাওড়া স্টেশনেও (Howrah Station)। তৃণমূল নেতা কর্মীদের যাতে ২১ সে জুলাইয়ের জন্য কলকাতায় আসতে সমস্যা না হয় তার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে স্পেশাল ট্রেনেরও।
২১ সে জুলাই উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা । Security Arrangements on The Occasion of 21st July :
সূত্র অনুযায়ী খবর, আগামীকাল অর্থাৎ ২১সে জুলাই মোতায়েন থাকবে ৫০০০ পুলিশ। রাস্তার নিরাপত্তার জন্য থাকবেন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদা ৩১ জন অফিসার-সহ যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদা ৮ জন অফিসার। এছাড়াও সভামঞ্চ চত্বরে থাকবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদা ৮০ জন অফিসার। পাশাপাশি, আপাতত স্থির করা হয়েছে, ২০ টি উঁচু ছাদ থেকে নজরদারি চালাবে পুলিশ। আপৎকালীন পরিস্থিতি সামলাতে মজুত থাকবে ১৮টি অ্যাম্বুল্যান্স। হেল্প ডেস্ক থাকবে ৪৮টি। অন্যদিকে, থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ৪টি টিম, ৬টি কুইক রেসপন্স টিম। এছাড়া মেট্রোয় বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও রাখা হবে। পুরো ধর্মতলা চত্বরে নজর রাখা হবে ৪৫টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে।
২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চের কাঠামো । 21st July Stage Structure :
চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ এর ২১ সে জুলাইয়ের মূল মঞ্চকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, মঞ্চের প্রথম ভাগের উচ্চতা ১০ ফুট, দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট ও প্রস্থ ২৮ ফুট। এই ভাগে থাকবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা। এরপর মঞ্চের দ্বিতীয় ভাগের দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ২৮ ফুট ও উচ্চতা ১১ ফুট। এই ভাগে বসবেন দলের সাংসদ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। আর মঞ্চের তৃতীয় ভাগের উচ্চতা ১২ ফুট, দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট ও প্রস্থ ২৮ ফুট। এখানে বসবেন বিধায়ক ও দলের অন্যান্যরা।
এছাড়াও মূল মঞ্চের পাশে আরও একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যার উচ্চতা ৫ ফুট, দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট ও প্রস্থ ২৮ ফুট। এখানে বসবেন দলের কাউন্সিলর ও আরও বেশকিছু জন। সব মিলিয়ে মঞ্চে প্রায় ৬০০ জনের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঞ্চে ওঠার জন্য থাকছে মোট তিনটি সিঁড়ি। একটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্য, এবং বাকি দু'টি সিঁড়ি অন্যান্যদের জন্য। পাশাপাশি পোডিয়ামের উচ্চতা থাকছে ১২ ফুট, দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। নেতৃত্বের ভাষণ যাতে সভায় উপস্থিত প্রতিটি মানুষ ঠিকমতো শুনতে পান, তার জন্য থাকছে ১,০০০টি মাইকের ব্যবস্থা।
২১ সে জুলাইয়ের ইতিহাস । History of 21st July :
প্রতি বছরই ২১ সে জুলাইয়ের অপেক্ষায় থাকেন তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা। এই দিনের বেশ কয়েক দিন আগের রাজ্য জুড়ে দলের সমর্থকরা কলকাতায় আসতে শুরু করেন। এই দিনটি তৃণমূলের কাছে শহীদ দিবস।
১৯৯৩ সালে তখন সরকার চালাচ্ছে বামফ্রন্ট। তৃণমূল কংগ্রেসের তখনও জন্ম হয়নি। সেই সময় দলের সভানেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবি তোলেন মমতা। আর সেই দাবি নিয়েই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেয় যুব কংগ্রেস। সেই বছর ২১ সে জুলাই সকাল ১০টায় শুরু হয় জমায়েত। মোট পাঁচটি এলাকা দিয়ে মিছিল করে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরা। রাস্তায় নামেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্রের মতো নেতারাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযান আটকাতে রাস্তায় নামে পুলিশও। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি করা হয় ব্যারিকেড। তবে শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট ও পাথরবৃষ্টি। পালটা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশও।
এরপর ব্রেবোর্ন রোডে (Brabourne Road) ধাক্কাধাক্কি এবং কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় মেয়ো রোড (Mayo Road) ও রেড রোডের (Red Road) সংযোগস্থল। ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে পরে পরিস্থিতি। এরপরেই গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। ঘটনায় মৃত্যু হয় শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ রায়, বন্দনা দাস, ইনু মিঞা, আবদুল খালেক।
১৯৯৩ সালের ২১ সে জুলাইয়ের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতি। এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করলেও ২১ সে জুলাইয়ের রক্তাক্ত ঘটনা ভোলেননি তৃণমূল সুপ্রিমো সহ তৃণমূল। যার ফলে সেদিনের ঘটনায় শহীদদের সম্মান জানাতে প্রতি বছর এই দিন দলের সকলেই একত্রিত হন।
চলতি বছর ২১ জুলাইয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ দিন কয়েক আগেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election) হয়েছে। নির্বাচনে নানান অশান্তি, খুনের ঘটনা ঘটলেও শেষে উড়েছে সবুজ ঝড়। তবে এই নিয়ে নানান অভিযোগ, তর্ক বিতর্কও হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফলে ২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে এই বছর তৃণমূল সুপ্রিমো দলের জন্য কী বার্তা দেন তার অপেক্ষায় নেতা-সমর্থকেরা।