Rabindra Jayanti 2023 | ২৫শে বৈশাখে রবি স্মরণ, সাজ সাজ রব জোড়াসাঁকো, বিশ্বভারতী!

Tuesday, May 9 2023, 11:18 am
highlightKey Highlights

আজ ১৬২তম রবীন্দ্র জয়ন্তী। রবি স্মরণে গোটা রাজ্য, বিশ্ব জুড়ে আয়োজন করা হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানের। রবি জন্মবার্ষিকীতে রইলো রবি ঠাকুরের জীবনী সম্পর্কে নানান তথ্য।


আজ ২৫ শে বৈশাখ অর্থাৎ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) জন্মোৎসব। গোটা বাংলা তথা বিশ্বে পালিত হচ্ছে রবীন্দ্র জয়ন্তী (Rabindra Jayanti )। এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে পালন করা হচ্ছে রবি ঠাকুরের  ১৬২তম জন্মবার্ষিকী।

এই বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী
এই বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী

গোটা বিশ্বের কাছে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেও, বাঙালির কাছে তিনি রবি ঠাকুর। তাই ক্যালেন্ডারে এদিনটা মঙ্গলবার হলেও, আজ 'রবি'-বার। এদিন সকাল থেকেই রাজ্যজুড়ে আয়োজন করা হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। কোথাও প্রভাত ফেরির আয়োজন, কোথাও আবার রবি ঠাকুরের কবিতা, সঙ্গীতের আয়োজন। জোড়াসাঁকো (Jorasanko) ঠাকুর বাড়িতে কথায়-গানে-কবিতায় চলছে রবি-স্মরণ।

Trending Updates
জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে চলছে রবি-স্মরণ
জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে চলছে রবি-স্মরণ

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে শান্তিনিকেতনেও (Shantiniketan) সাজ সাজ রব। এদিন ভোর ৫টায় বৈতালিকের মাধ্যমে রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু হয়। উপাসনাগৃহে স্তোত্রপাঠ ও রবীন্দ্রসঙ্গীতে গলা মেলান বিশ্বভারতীর (Visva Bharati) পড়ুয়ারা। কিন্তু 'বিশেষ কারণে' ২৫ বৈশাখের দুটি মূল অনুষ্ঠান জন্মোৎসব পালন ও শাপমোচন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। সূত্রের খবর, সকাল ৯টায় মাধবী বিতানের অনুষ্ঠান ও সন্ধেয় গৌর প্রাঙ্গণে শাপমোচন নাটক বাতিল করা হয়েছে।

২৫ বৈশাখের দুটি মূল অনুষ্ঠান বাতিল বিশ্বভারতীতে
২৫ বৈশাখের দুটি মূল অনুষ্ঠান বাতিল বিশ্বভারতীতে

প্রসঙ্গত, অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) জমি বিতর্ক নিয়ে তার বাসভবন প্রতিচির সামনে এখনও ধরনা মঞ্চ অব্যাহত। বিশ্বভারতী বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় এই ধরনা মঞ্চের। জানা গিয়েছে ধরনা মঞ্চ চলাকালীন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তাই জন্যই বিশ্বভারতীর তরফ থেকে রবীন্দ্র জয়ন্তীর মূল দুটি অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

বিশ্বভারতী
বিশ্বভারতী

রবি ঠাকুরের শৈশবকাল | Childhood Of Rabindranath Tagore :

১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫শে বৈশাখ অর্থাৎ ১৮৬১ সালের ৭ই মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ৬ নং দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের পারিবারিক বাসভবনে সারদা দেবী ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৩তম কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ। শৈশবেই মা-কে হারিয়ে একাকী কেটেছে রবি ঠাকুরের ছেলেবেলা। দীর্ঘ কয়েক বছর পর্যন্ত বাবা, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গেও বিশেষ সাক্ষাৎ হয়নি তাঁর। ছোটবেলায় বেশিরভাগ সময় কাটতো বাড়ির চিলেকোঠায়, জানালার ফাঁক দিয়ে প্রকৃতিকে ও বাইরের জগৎ উপভোগ করে। এরপর ১৮৭৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে শান্তিনিকেতন গিয়ে প্রথম কলকাতার বাইরে পা রাখেন ছোট্ট রবি৷

শৈশববেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শৈশববেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবি ঠাকুরের শিক্ষালাভ | Education Of Rabindranath Tagore :

শৈশবকাল থেকেই বিদ্যালয়ের গতে বাঁধা শিক্ষা ব্যবস্থায় মন ছিল না রবি ঠাকুরের। যার ফলে কয়েক বছর যেতেই  দাদা হেমেন্দ্রনাথের হাত ধরে বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা চালু করেন রবীন্দ্রনাথ। তবে সেই সঙ্গে মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই কাব্যরচনা শুরু করেন তিনি। এমনকি নয় বছর বয়সে অনুবাদ করেন শেক্সপিয়ারের 'ম্যাকবেথ'।

মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই কাব্যরচনা করতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ
মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই কাব্যরচনা করতে শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ

বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইচ্ছা মতো ব্যারিস্টার হওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন রবি ঠাকুর। এরপর ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনে (University of London) আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু রবি ঠাকুরের মন পরে থাকতো সাহিত্যচর্চাতেই। বিদেশে থাকাকালীনই ইংরেজি সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নানা জ্ঞান অর্জন করেন রবীন্দ্রনাথ।

১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টার হওয়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন রবি ঠাকুর
১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টার হওয়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন রবি ঠাকুর

রবি ঠাকুরের সাংসারিক জীবন | Family Life Of Rabindranath Tagore :

১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে সাতপাকে বাধিত হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর ১৮৯০ সালে শিয়ালদহে  পারিবারিক জমিদারির  তত্ত্বাবধান শুরু করেন রবি ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মৃণালিনী দেবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মৃণালিনী দেবী

১৮৮৬ সালের ২৫এ অক্টোবর জন্ম নেন মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের প্রথম সন্তান মাধুরীলতা। এরপর জন্ম হয় আরও চার সন্তানের। যদিও রবিঠাকুর ও মৃণালিনী দেবীর ৫ সন্তানের মধ্যে দুই সন্তানের মৃত্যু হয় তাদের শৈশবেই। এছাড়াও ১৯০২ সালে পরলোক গমন করেন মৃণালিনী দেবীও। এরপরেই পাকাপাকিভাবে শান্তিনিকেতনে থাকতে শুরু করেন রবি ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার সন্তানরা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার সন্তানরা

স্বাধীনতা আন্দোলনে রবি ঠাকুর | Rabindranath Tagore in the Freedom Movement : 

ভারতকে ইংরেজের শাসন থেকে মুক্ত করতে ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাশে দাঁড়িয়ে শক্তি জাগ্রত করতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন একের পর এক দেশাত্মবোধক গান, কবিতা। রবি ঠাকুরের অতুলনীয় সাহিত্যের জন্য ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা  ‍‍'নাইট‍' উপাধিতে ভূষিত হন কবিগুরু। কিন্তু ১৯১৯ সালে মর্মান্তিক জালিয়ানওয়ালাবাগ (Jallianwala Bagh) হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সেই 'নাইট‍' উপাধি ত্যাগ করেন তিনি। অন্যদিকে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল রবি ঠাকুরের। মহাত্মা গান্ধীকে (Mahatma Gandhi) জাতির জনক উপাধিও  দিয়েছিলেন তিনি।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে 'নাইট‍' উপাধি ত্যাগ করেন কবিগুরু
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে 'নাইট‍' উপাধি ত্যাগ করেন কবিগুরু

রবি ঠাকুরের সাহিত্যচর্চা | Literature Work Of Rabindranath Tagore :

ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা করে এসেছেন রবি ঠাকুর। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সিঁড়ি আর ছাদে বসেই লিখেছেন অসংখ্য গান, কবিতা, উপন্যাস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাঁর সাহিত্য চর্চা আর বাংলা সাহিত্য জগৎ পেতে থাকে একের পর এক অনবদ্ধ কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক, চিত্র। তথ্য অনুসারে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮ টি নাটক, ১৩ টি উপন্যাস ও ৩৬ টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন, ৯৫ টি ছোটগল্প এবং ১৯১৫ টি গানের সৃষ্টি করেছেন।

১৯১৫ টি গানের সৃষ্টি করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৯১৫ টি গানের সৃষ্টি করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কেবল গান, কবিতা, উপন্যাসই নয়, লিখেছেন দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত (National Anthems)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই এমন একজন কবি যিনি দুই দেশের জন্য জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত 'জনগনমন' (Jana Gana Mana) এবং বাংলাদেশের 'আমার সোনার বাংলা' (Amar Sonar Bangla) দুটি গানই তাঁর রচনা। এছাড়াও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতও রবীন্দ্রনাথ রচিত একটি বাংলা গানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল বলে দাবি অনেকের।

দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন রবি ঠাকুর
দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত লিখেছেন রবি ঠাকুর

রবি ঠাকুরের শেষ জীবন | Last life of Rabindranath Tagore :

বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমি নিয়ে ১৯৬৩ সালে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্রনাথ। পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ পাঁচজন ছাত্র নিয়ে শুরু করেন ব্ৰত্মচর্যাশ্রম নামে একটি বিদ্যালয়, যা ধাপে ধাপে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বভারতীতে। রবি ঠাকুরের শেষ জীবনের কয়েকটা বছর কাটে সেখানেই। পরে ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বকবি।

কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ
কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ

নিজের সময়ের থেকেও এগিয়ে ছিল তাঁর চিন্তাভাবনা। তাঁর অতুলনীয় কাজের জন্য ১৯১৩ সালে ভারতের প্রথম ও ইউরোপের বাইরে অন্য দেশের নাগরিক হিসাবে প্রথম নোবেল পুরষ্কারে (Nobel Prize) সম্মানিত হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরবর্তীকালে সেই পুরস্কারের অর্থেই নির্মিত হয় বিশ্বভারতী।

ভারতে প্রথম নোবেল পুরষ্কার পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভারতে প্রথম নোবেল পুরষ্কার পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বঙ্গ বাদেও বর্তমানে গোটা বিশ্বের নানা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন। সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ হলেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সঙ্গীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন কবিগুরু। যার ফলে তাঁর সৃষ্টিগুলি আজও মানব জগতে অমর।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File