ISRO Chandrayaan 3 | ৮ মিটার পথ অতিক্রম করে ফেলেছে 'প্রজ্ঞান'! কীভাবে কাজ করবে রোভারটি?১৪দিন পরই বা কী হবে?

Friday, August 25 2023, 2:49 pm
highlightKey Highlights

সৌরশক্তির সম্বলে কাজে নেমে পড়েছে রোভার প্রজ্ঞান। ১৪দিনের পরীক্ষা শেষে প্রাণ ফিরে পেতে পারে ল্যান্ডার, রোভার। বসে নেই ইসরোও। চন্দ্রযান-৪ এর পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা, সঙ্গী হবে জাপান।


২৩সে অগাস্ট ভারতীয় সময় ঠিক সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৩ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস গড়েছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩ (ISRO Chandrayaan 3)। গোটা বিশ্ব জুড়ে এখন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organisation) ও চন্দ্রযান-৩ এর বাহবা। গোটা ভারতবাসী এখনও সেলিব্রেশন মুডে। তবে অবতরণ করার পর সময় মতো কিন্তু ঠিক কাজে নেমে পড়েছে রোভার 'প্রজ্ঞান' (Rover Pragyan)। ইসরোর এক্স হ্যান্ডেল (টুইটার) থেকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেল, সৌরশক্তির যোগান হতেই ল্যান্ডার 'বিক্রমে'র (Lander Vikram) মধ্যে থেকে গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে এলো প্রজ্ঞান। অন্যদিকে, থিম নেই ইসরোও। 'চন্দ্রযান-৪' (Chandrayaan-4) প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। 

চাঁদের পৃষ্ঠ ছোঁয়ার পর ল্যান্ডার 'বিক্রম' পৃথিবীতে একের পর এক বার্তা পাঠিয়ে চলেছে। নিজের গন্তব্যে পৌঁছে কিছুক্ষন বিশ্রাম করে নেয় ল্যান্ডার 'বিক্রম'। তারপই খুলে যায় এর দরজা। যার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে রোভার 'প্রজ্ঞান'। সময় মতো কাজও শুরু করে দেয় সে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, চাঁদের বুকে প্রত্যাশা মতোই কাজ করছে চন্দ্রযান-৩। ইসরো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে সক্রিয় করা হয়েছে রোভারের তিনটি পেলোডকে। 

চাঁদে কীভাবে কাজ করবে রোভার 'প্রজ্ঞান' ? । How Will Rover 'Pragyan' Work on the Moon?

ইসরো জানিয়েছে, রোভার 'প্রজ্ঞানে'র তিনটি পেলোড রয়েছে, যা হল - ILSA, RAMBHA and ChaSTE। এর মধ্যে RAMBHA-LP চন্দ্রপৃষ্ঠের প্লাজমার ঘনত্ব এবং সময়ের সঙ্গে তার পরিবর্তন পরিমাপ করবে। ChaSTE চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি তাপমাত্রাগত বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ করবে। ILSA অবতরণ স্থানের চারপাশে কম্পন পরিমাপ এবং চাঁদের মাটি ও আবরণের গঠন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। সৌরশক্তির মাধ্যমেই কাজ করবে প্রজ্ঞান।

শুক্রবার সন্ধ্যে নাগাদ ইসরো সোশ্যাল মাধ্যমে জানিয়েছে, পরিকল্পনা মাফিকই এগোচ্ছে রোভারের কার্যকলাপ। ইতিমধ্যেই রোভারটি সফলভাবে প্রায় ৮ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। রোভার পেলোডে LIBS এবং APXS চালু আছে। প্রোপালশন মডিউল, ল্যান্ডার মডিউল এবং রোভারের সমস্ত পেলোড নামমাত্র কাজ করছে।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর সময় হিসেবে আগামী ১৪ দিন ধরে চাঁদের দেশে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবে 'প্রজ্ঞান'। চাঁদের এই দুর্গম এলাকা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দক্ষিণ মেরু অনাবিষ্কৃত। ওই অঞ্চলে বরফের উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। এই বরফই ভবিষ্যতে চাঁদে বসবাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ওই অঞ্চলে খননকার্য কিংবা মঙ্গলে অভিযানের রূপরেখাও তৈরি করে দিতে পারে দক্ষিণ মেরু অভিযান। এই সব নিয়েই পরীক্ষা করবে প্রজ্ঞান। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, পরীক্ষা শেষে কী হবে চন্দ্রযান-৩ এর? চাঁদেই থেকে যাবে 'বিক্রম'-'প্রজ্ঞান'? নাকি পৃথিবীতে ফিরে আসবে তারা?

চাঁদে পরীক্ষা শেষে চন্দ্রযান-৩-এর কী হবে? । What Will Happen to Chandrayaan-3 After theTest on the Moon?

সরাসরি বিষয়টি খোলসা না করলেও, ‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞান’কে নিয়ে যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর, আগেই তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। আপাতত চাঁদের বুকে ‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞানে’র কার্যকালের মেয়াদ এক চন্দ্রদিবস বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর হিসেবে যা প্রায় ১৪ দিন। অর্থাৎ পৃথিবীর বুকে যেমন ১২ ঘণ্টা আলো এবং ১২ ঘণ্টা অন্ধকারের নিরিখে গোটা দিনের হিসেব হয়, চাঁদের বুকে এই হিসেব হয় ১৪ দিনের নিরিখে। অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে, ১৪ দিন সূর্যের আলো পায় চাঁদ, বাকি ১৪ দিন কাটে অন্ধকারে, প্রচণ্ড ঠান্ডায়। 

বর্তমানে এই মুহূর্তে সূর্যের আলো রয়েছে চাঁদের বুকে। তাই সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নির্বিঘ্নে কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারছে ‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞান’। তবে অন্ধকার নামলে কাজকর্ম বন্ধ রাখা হবে, নিস্তেজ করে রাখা হবে ল্যান্ডার, রোভারকে। অন্ধকার কেটে ফের পরের ১৪ দিন যখন সূর্যের আলোয় আলোকিত হবে থাকবে চাঁদ, আবারও প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনা হবে তাদের মধ্যে। ফের কাজে নামবে ‘বিক্রম’ এবং ‘প্রজ্ঞান।

এই প্রসঙ্গে ইসরো প্রধান এস সোমনাথ (ISRO chief S Somnath) বলেছিলেন,একটি একটি করে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। এক চন্দ্রদিবসের মধ্যেই সম্পূর্ণ করতে হবে সেগুলি। যত ক্ষণ মাথার উপর সূর্য থাকবে, তত ক্ষণ শক্তির জোগান থাকবে। সূর্যাস্ত হওয়ার পর তাপমাত্রার পারদ -১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। ওই তাপমাত্রায় বিক্রম, প্রজ্ঞানের টিকে থাকা সম্ভব নয়। তারপরও যদি কোনও ভাবে টিকে যায়, তাহলে আবার প্রাণসঞ্চার করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করা যাবে।

 যতক্ষণ মাথার উপর সূর্য থাকবে, তত ক্ষণ শক্তির জোগান থাকবে। সূর্যাস্ত হওয়া মাত্র তাপমাত্রা -১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। ওই তাপমাত্রায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। তারপরও যদি কোনও ভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, তাহলে অতি উত্তম। আবার প্রাণসঞ্চার করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করা যাবে।

 ইসরো প্রধান এস সোমনাথ 

প্রসঙ্গত, ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞানের মতো থিম নেই ইসরোও। আগামী তিন বছরের মধ্যে ফের চাঁদের মাটিতে ইসরোর মহাকাশযান নামবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এই পরের অভিযানে ইসরো একা নয়, জাপানের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র 'জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি' (Japan Aerospace Exploration Agency) বা  জাক্সা (Japan Aerospace Exploration Agency) সঙ্গী হবে ভারতের। জানা গিয়েছে,পরবর্তী অভিযানে ইসরোর লক্ষ্য চাঁদের দুই মেরু। 'লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন মিশন' (Lunar Polar Exploration Mission) নামে এই অভিযানকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে 'লুপেক্স' (Lupex) নামে। চাঁদে আদৌ জল আছে কিনা তারই পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ-সহ সঠিক উত্তর জানাবে 'লুপেক্স'।

তবে একটা অভিযান চালাতে গেলে মহাকাশযানকে প্রযুক্তিগতভাবে অনেকটাই উন্নত হতে হবে। চন্দ্রযান-৪ সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হবে না। ওই অভিযানে বিদ্যুতের অবিরাম সরবরাহ পেতে পাতলা ফিল্মের সৌরকোষ এবং আল্ট্রা হাইডেনসিটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হবে বলে জানা গিয়েছে। চাঁদের এক-একটা দিন পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান। চাঁদে যখন পৃথিবীর হিসেবে টানা ১৪ রাত সূর্যের আলো পাওয়া যাবে না। ফলে সেই সময়েও যাতে মহাকাশযান সক্রিয় থাকে, সেই জন্য নিরবিচ্ছিন্ন শক্তি বা পাওয়ার সরবরাহ করা নিয়ে এখনই কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ইসরোর পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী দিনে মঙ্গল গ্রহ এবং সৌরজগতের অন্য কোনও গ্রহ বা উপগ্রহে অভিযান চালাতেও এই প্রযুক্তি কাজে লাগতে পারে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File