দেশ

Name Change India | 'ইন্ডিয়া' না 'ভারত'? দেশের নাম পরিবর্তন নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা! এর আগে কোন কোন দেশ বদলেছে নাম?

Name Change India | 'ইন্ডিয়া' না 'ভারত'? দেশের নাম পরিবর্তন নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা! এর আগে কোন কোন দেশ বদলেছে নাম?
Key Highlights

প্রথমে জি-২০ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির তরফে আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয় ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ । এরপর প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও লেখা হয় ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। বিরোধীদের আশঙ্কা, যে কোনও সময়ে ইন্ডিয়া থেকে ভারত করতে পারে মোদি সরকার।

দেশের নাম বদল নিয়ে ক্রমশ ঘনাচ্ছে জল্পনা। প্রথমে জি-২০ সম্মেলনে (G20 Summit 2023) রাষ্ট্রপতির তরফে আমন্ত্রণপত্রে লেখা ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ (President of Bharat)। এরপর বিতর্ক উসকে গেরুয়া শিবির, বিজেপির (BJP) ‘দ্য প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’ (The Prime Minister of India) পোস্ট। তাহলে কি সত্যিই রাতারাতি বদলে যাবে দেশের নাম? যে কোনও সময়ে 'ইন্ডিয়া' থেকে 'ভারত' করতে পারে মোদি সরকার? বদলে যাবে ইসরো, ইন্ডিয়া গেট, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি সব কিছুর নামও?

‘ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তন’ বিতর্কের সূত্রপাত । How  'India's Name Change' Controversy Started :

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে (President Draupadi Murmu) 'প্রেসিডেন্ট অফ ভারত' হিসেহে উল্লেখ করে তাঁর স্বাক্ষরিত জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজের কার্ড বিলি থেকে শুরু হয় ‘ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তন’ (Name Change India) বিতর্ক। কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতিই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Prime Minister Narendra Modi) ক্ষেত্রেও একই বিষয় দেখা গিয়েছে। ২০তম এশিয়ান (ASEAN) সামিট এবং ১৮তম ইস্ট এশিয়া সামিটে যোগদান করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৬ই ও ৭ই সেপ্টেম্বর তিনি থাকবেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় (Jakarta, Indonesia)। এই সফরের সরকারি নোটিশেই 'প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া'র বদলে লেখা হয়, 'প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত'।

ইন্ডিয়া থেকে ভারত নাম পরিবর্তনের জল্পনা উঠতেই এক এক মত প্রকাশ করেন বিরোধী পক্ষ। অনেকের মতে, বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া' নামে পরিচিতি লাভ করার পর থেকেই দেশের নাম বদল করার কথা ভাবনা চিন্তা শুরু করে মোদি সরকার।  ‘ইন্ডিয়া’ (I.N.D.I.A.) জোটে রয়েছে কংগ্রেস (Congress), তৃণমূল (TMC), শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি (NCP), এসপি (SP), জেডিইউ (JDU), ডিএমকের (DMK) মতো বিজেপি-বিরোধী দল।  তবে অনেকের মতে, ‘ইন্ডিয়ার নাম পরিবর্তন’ (Name Change India) করার ঘটনা কেবল গুজব মাত্র। আবার অনেকেই বলছেন, রাতারাতি দেশের নাম বদলে গেলে তা নতুন কিছু হবে না। কারণ এর আগে বিশ্বে বহু দেশের নামই পরিবর্তন হয়েছে। দেখে নিন রাতারাতি কোন কোন দেশ নাম পরিবর্তন করেছে।

১. তুরকিয়ে । Turkey :

দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ (Southeast Europe) এবং পশ্চিম এশিয়ার (West Asia ) সীমান্তে অবস্থিত টার্কি। যদিও টার্কি আগে এই নাম পরিচিত ছিল না। প্রাচ্যে টার্কি ‘তুরস্ক’ নামে পরিচিত ছিল। তবে আবারও নাম বদল করেছে দেশ। ২০২২ সালের জুনে রাষ্ট্রপুঞ্জকে এই দেশ জানিয়েছে, তাদের যেন ‘তুরকিয়ে’ নামে ডাকা হয়। দেশের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এর্দোগান (Recep Tayyip Erdogan) একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন নামবদলের কারণ। এই দেশের সংস্কৃতি, সভ্যতা, মূল্যবোধকে সব থেকে ভাল ভাবে প্রকাশ করে নতুন নাম ‘তুরকিয়ে’, যার জন্যই এই নামকরণ।

২. নেদারল্যান্ডস । Netherlands :

বিশ্ববিখ্যাত নেদারল্যান্ডস পূর্বে পরিচিত ছিল হল্যান্ড নামে। তবে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি বদলাতে ওই নাম বদল করা হয় বলে জানায় ডাচ সরকার। নেদারল্যান্ড সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, মাদকের রমরমা, দেহব্যবসার কারণে ইউরোপের এই দেশের বেশ বদনাম হয়েছিল। নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল। সেই ভাবমূর্তি পরিবর্তনের কারণেই নামবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

৩. চেখিয়া । Czechia :

চেক রিপাবলিক ২০১৬ থেকে নাম পরিবর্তন করে হয়েছে চেখিয়া। দেশের সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পূর্বত চেক রিপাবলিকের খেলোয়াড়দের জার্সিতে এত বড় নাম লিখতে সমস্যা দেখা দিত। এই দেশে তৈরি পণ্যের গায়েও এত বড় নাম লিখতে অসুবিধা হচ্ছিল সংস্থাগুলির। সে কারণে নাম বদল করে ছোট করা হয় নাম।

৪. মায়ানমার। Myanmar :

দেশে সংখ্যাগুরু ছিল বর্মি সম্প্রদায়ের মানুষ। সে কারণে ভারতের পূর্বের দেশটির নামও ছিল বর্মা। তবে দেশে জোরজবরদস্তি ক্ষমতায় আসে সেনা নিয়ন্ত্রিত গোষ্ঠী সরকার। তৎকালীন সময়ে গণতন্ত্রের দাবিতে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে সেই বিদ্রোহ দমন করা হয়। এরপরেই ১৯৮৯ সালে সেনাকর্তারা দেশের নাম বদলে ‘মায়ানমার’ করেন।

৫. শ্রীলঙ্কা । Sri Lanka :

ব্রিটিশরা ভারতের দক্ষিণে ছোট্ট দেশটির নাম রেখেছিল ‘সিলোন’। তবে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটার পর পূর্বতন শাসকদের চিহ্ন মুছে ফেলতে ১৯৭২ সালে দেশটির নাম বদল করে রাখা হয় শ্রীলঙ্কা। ২০১১ সালে সরকারি নথিপত্রেও ‘সিলোন’ নামটির ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়।

৬. কম্বোডিয়া । Cambodia :

কম্বোডিয়ার আগে নাম ছিল কাম্পুচিয়া। এই শব্দের  ইংরেজি ‘অনুকরণ’ হল কম্বোডিয়া। ১৯৭৬ সালে সে দেশের কমিউনিস্ট শাসকেরা দেশকে কাম্পুচিয়া বলে অভিহিত করতেন। ফলে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হওয়ার পর দেশের নাম বদলে সরকারি ভাবে ‘কম্বোডিয়া’ রাখা হয়।

৭. কিংডম এসওয়াতিনি । Kingdom of Eswatini :

২০১৮ সালে আফ্রিকার দক্ষিণের দেশ কিংডম অফ সোয়াজিল্যান্ডের (Kingdom of Swaziland) নাম হয় কিংডম এসওয়াতিনি। রাজা তৃতীয় এমসোয়াতি দেশের নামবদল করেন। দেশের নাম বদল করার কারণ হিসেবে শাসকের তরফে জানানো হয়েছিল, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে নামের মিল থাকায় ধন্দ তৈরি হচ্ছিল। সে কারণেই নামবদলের সিদ্ধান্ত।

৮. রিপাবলিক অফ নর্থ ম্যাসিডোনিয়া । Republic of North Macedonia :

২০১৯ সালে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ রিপাবলিক অফ ম্যাসিডোনিয়ার নাম বদলে রাখা হয় ‘রিপাবলিক অফ নর্থ ম্যাসিডোনিয়া’। যদিও সরকারের তরফে জানানো হয়, দেশের মানুষেরা ‘ম্যাসিডোনিয়ান’ হিসাবেই পরিচিত হবেন।

এছাড়াও এক কালে পার্সিয়া নামে পরিচিত দেশও ১৯৩৫ সালে সম্রাট রেজা শাহের ক্ষমতায়নে আসার পর নাম বদল করে রাখে ‘ইরান’। উল্লেখ্য, ভারতের সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, 'ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত, রাজ্যের সমষ্টি।' অর্থাৎ ইন্ডিয়া এবং ভারত, দুই নামেই সংবিধানের সিলমোহর রয়েছে। তবে ইন্ডিয়াকে সরিয়ে দেশের নাম হিসেবে কেবল ভারত রাখা নিয়ে জল্পনা উঠেছে তুঙ্গে। ফলে এখন সকলেরই প্রশ্ন, 'ইন্ডিয়া' না 'ভারত'?