রাজ্য

Kaushiki Amavasya | কৌশিকী অমাবস্যায় ভক্তদের ভিড় তারাপীঠে! জানুন দেবী কৌশিকী কে? কেনই বা পালন করা হয় "কৌশিকী অমাবস্যা"!

Kaushiki Amavasya | কৌশিকী অমাবস্যায় ভক্তদের ভিড় তারাপীঠে! জানুন দেবী কৌশিকী কে? কেনই বা পালন করা হয় "কৌশিকী অমাবস্যা"!
Key Highlights

ভোর ৪.৩২ মিনিটে অমাবস্যা লাগার সঙ্গে-সঙ্গেই তারাপীঠে শুরু হয় মা তারার বিশেষ পুজো। কৌশিকী অমাবস্যার তিথির বৌদ্ধ ও হিন্দু দুই সাধনাতেই বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।

আজ, ১৪ই সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার কৌশিকী অমাবস্যা (Kaushiki Amavasya)। ভাদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যার তিথি আর বাদ বাকি চার পাঁচটা অমাবস্যার থেকে আলাদা। হিন্দু ও বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে এই অমাবস্যার প্রভাব তান্ত্রিক চর্চায় বেশ তাৎপর্য রাখে। প্রত্যেক বছরের মতোই  বীরভূমের তারাপীঠে মা তারার কৌশিকী অমাবস্যায় ধুমধাম করে পুজো হয়। দেখা যায় অগুনতি ভক্তদের ভিড়। আজও সকাল থেকেই ভক্তদের ঢল তারাপীঠের মন্দিরে।

চলতি বছর কৌশিকী অমাবস্যা পড়ছে, ১৪ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২৭ ভাদ্র।  বৃহস্পতিবার ভোর ৪ টা ৩০ মিনিট থেকে পড়ছে কৌশিকী অমাবস্যার (Kaushiki Amavasya) তিথি। আর ২৮ ভাদ্র অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকবে তিথি। এদিন ভোর ৪.৩২ মিনিটে অমাবস্যা লাগার সঙ্গে-সঙ্গেই তারাপীঠে (Tarapith) শুরু হয় মা তারার বিশেষ পুজো। পুজোর সূচনা হয় মঙ্গলারতির মাধ্যমে। কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষ্যে ভক্তদের ভিড় সামাল দিতে ১ হাজার পুলিশ এবং সতেরশো সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন রয়েছে। পূর্ব রেলের তরফ থেকে চলবে বিশেষ ট্রেনও।

উল্লেখ্য, এই কৌশিকী অমাবস্যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে, বহু পৌরাণিক কাহিনি। কথিত রয়েছে তারাপীঠে সাধক বামাক্ষ্যাপা ১২৭৪ বঙ্গাব্দে এই কৌশিকী অমাবস্যার  (Kaushiki Amavasya) তিথিতেই সিদ্ধিলাভ করেন। তারাপীঠ মহাশ্মশানের শ্বেত শিমূল গাছের নীচে বসে সাধনা করেন বামদেব। ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বামাক্ষ্যাপা মা তারার আবির্ভাব পান। এছাড়াও এই তিথিতে দেবী কালিকা কৌশিকী রূপে বিশেষ সন্ধিক্ষণে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামের অসুরদের দমন করেন। 

কৌশিকী  শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, আদ্যাশক্তির রূপ বিশেষ। পুরাণ মতে, কৌশিকী রূপেই শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন আদ্যাশক্তি। শ্রী শ্রীচণ্ডীতে বর্ণিত মহা সরস্বতী দেবীর কাহিনীতে কথিত আছে, পুরাকালে একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ কঠিন সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে প্রজাপতি ব্রহ্মা তাঁদের বর দেন, যে কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবেন না। কেবল কোনও অ-যোনি সম্ভূত নারী তাঁদের বধ করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন এক নারী, যিনি মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নেননি, তাঁর হাতেই এই দুই অসুর ভাই-এর মৃত্যু হবে। 

পুরান মতে, সতী যখন দক্ষ যজ্ঞ স্থলে দেহত্যাগ করেছিলেন, তখন কালিকা-জন্মে তাঁর রং ছিল কালো মেঘের মতো। এই কারণেই শিব তাঁকে 'কালিকা' বলে ডাকতেন। শুম্ভ-নিশুম্ভর হাত থেকে রক্ষা করতে শিব যখন সকলের সামনেই কালিকাকে ডেকে ওঠেন, তখন ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর মানস সরোবরের ধারে কঠিন তপস্যা শুরু করেন। তপস্যার শেষে তাঁর গায়ের হয়ে ওঠে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। আর ওই কালো কোশিকাগুলি থেকে এক অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ দেবীর সৃষ্টি হয়। যিনি দেবী কৌশিকী। সেই দেবী কৌশিকীই এই অমাবস্যা তিথিতে শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করেন। তাই এই অমাবস্যার নাম 'কৌশিকী অমাবস্যা'। 

কৌশিকী অমাবস্যার দিনে তারাপীঠে দেবীর নিশিপূজার আয়োজন করা হয়। তারাপীঠে মায়ের পুজোয় ২ বার ভোগ হয়। একবার নিশিথ ভোগ, আর একবার মধ্যাহ্ন ভোগ। মধ্যাহ্ন ভোগে থাকে, পোলাও, অন্ন, পাঁচ রকমের ভাজা, সঙ্গে খিচুড়ি, বিভিন্ন তরিতরকারি। যেহেতু এই তিথিতে তন্ত্রসাধনাও করা হয়, তাই কারণবারি ও মাছও থাকে। সন্ধ্যায় থাকে লুচি, সুজি, ভাজা, বিভিন্ন মিষ্টি। এই দিয়ে দেওয়া হয় শীতল ভোগ। রাতে খিচুড়ি থাকে ভোগে, সঙ্গে পাঁঠা বলির অংশও মাকে নিবেদন করা হয়।   

কৌশিকী অমাবস্যার তিথির বৌদ্ধ ও হিন্দু দুই সাধনাতেই বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে এই রাতকে বলা হয় 'তারা রাত্রি'৷ বলা হয়ে থাকে, এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ ও নরক দুইয়ের দরজা মুহূর্তের জন্য খোলে ও সাধক নিজের ইচ্ছা মতো ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক শক্তি সাধনার মধ্যে আত্মস্থ করেন ও সিদ্ধি লাভ করেন৷ হিন্দু তন্ত্রমতে, এই তিথিতে কঠোর তপস্যায় আশাতীত ফল মেলে। সাধক কুলকুণ্ডলিনী চক্রকে জয় করতে পারে। এর ফলে কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে তারা মায়ের পুজো দিতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করেন অগণিত ভক্ত। মহাশ্মশানে আসেন সাধু-সন্ত, তন্ত্রসাধকরা।