লাইফস্টাইল

Jamai Sasthi | জামাইয়ের জন্য নয়, জামাইষষ্ঠীর শুরু মেয়ের জন্য! জৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠীতে জানুন জামাইষষ্ঠীর কারণ, ব্রত কথা!

Jamai Sasthi | জামাইয়ের জন্য নয়, জামাইষষ্ঠীর শুরু মেয়ের জন্য! জৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠীতে জানুন জামাইষষ্ঠীর কারণ, ব্রত কথা!
Key Highlights

বাংলার ঘরে ঘরে পালন হয় জামাইষষ্ঠী। শাস্ত্র মতে, মা ষষ্ঠীর কাছে কালো বিড়ালের অভিযোগ থেকে শুরু হয় জামাইষষ্ঠী পালন। জানুন কীভাবে কোন সময় এবং কেন পালিত হয় এই দিন।

 বাঙালীদের লৌকিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম একটি অনুষ্ঠান হল জামাই ষষ্ঠী (Jamai Sasthi)। চলতি বছর জামাই ষষ্ঠী পালন করা হচ্ছে আজ অর্থাৎ ২৫ সে মে, বাংলায় ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার। জামাই ষষ্ঠী ছাড়াও 'অরণ্য ষষ্ঠী' নামে পরিচিত এই শুভ দিনটিতে লৌকিক আচার অনুসারে দেবী ষষ্ঠীর পুজো ও জামাইদের বরণ করে আদর আপ্যায়ণ করা হয়।

মনে করা হয় মঙ্গলকাব্যের রচনাকাল অর্থাৎ মধ্যযুগ থেকেই বাংলায় জামাই ষষ্ঠী রীতির প্রচলন শুরু হয়। মেয়ের জীবন যাতে শশুর বাড়িতে ভালোভাবে কাটে এবং শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে জামাইয়ের সম্পর্ক যাতে ভালো হয় তাই জন্যই এই দিন পালন করা হয়। এই দিন পুজো করা হয় মা ষষ্ঠীর।  তবে মা ষষ্ঠীর পুজোর দিন কেন জামাইষষ্ঠী পালন করা হয় তা নিয়ে শাস্ত্রে রয়েছে প্রচলিত এক কাহিনী।

শাস্ত্র মতে, ভারতবর্ষ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় সংস্কার ছিল, কন্যার পুত্র সন্তান না হওয়া পর্যন্ত তার মা বা বাবা কন্যা গৃহে অর্থাৎ কন্যার শশুরবাড়িতে পদার্পণ করতে পারবেন না। উল্লেখ্য, সেই সময় চালু ছিল বাল্যবিবাহ। যার ফলে মেয়েদের অল্প বয়সে সন্তান ধারণের জন্য শিশু মৃত্যুর হার বেশি ছিল। এই কারণেই কন্যার পুত্র সন্তান হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো এবং বিবাহিত মেয়ের বাড়ি যেতে পারতেন না তার মা বাবা। শাস্ত্র মতে,  সেক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যার মুখ দর্শনের জন্যই জৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠীকে বেছে নেওয়া হয় জামাইষষ্ঠী হিসাবে। এরপর থেকে জামাই ষষ্ঠীর দিন মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ করে সমাদর করা, কন্যার মুখদর্শন ও মা ষষ্ঠীর কাছে কন্যার পুত্র সন্তানের জন্য প্রার্থনা করা শুরু হয়।  

যদিও বর্তমানে এই সংস্কারে বেশ পরিবর্তন এসেছে। এখন জৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বাংলার ঘরে ঘরে জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়। ষষ্ঠী পুজো ছাড়াও এখন জামাইষষ্ঠীর অন্যতম বৈশিষ্ট হলো ভোজন পর্ব। আবার,যাদের জামাই নেই তারাও বাড়িতে সন্তানের মঙ্গলের জন্য মা ষষ্ঠীর পুজো করে থাকেন।

জামাই ষষ্ঠীতে সকাল থেকে উপবাস করে নানা নিয়মের মাধ্যমে এই ব্রত পালন করেন শাশুড়িরা। তবে এই অনুষ্ঠান পালনের জন্য দরকার বেশ কিছু উপকরণের। এছাড়াও এই রীতি পালন করতে হয় তিথি মেনে। ফলে জেনে নিন জামাইষষ্ঠী  কখন এবং কীভাবে পালন করবেন।

জামাইষষ্ঠীর তিথি :

এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে জামাই ষষ্ঠী পড়েছে, বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী- ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী- ২৫ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার। এদিন ষষ্ঠী তিথি শুরু হচ্ছে ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ রাত্রি ৩ টে ২৮ মিনিটে এবং ষষ্ঠী তিথি শেষ হচ্ছে ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, বিকেল ৫ টা ২৬ মিনিটে।

জামাইষষ্ঠী পালনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ :

অন্যান্য ষষ্ঠীর মতো এই ব্রততেও প্রধান হল পুজোর ডালি। যার মধ্যে কাঁঠালপাতার উপর পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল সাজানো থাকে। তার মধ্যে থাকে একটি করমচা, ১০৮ গাছা দূর্বা। অরণ্য ষষ্ঠীতে প্রয়োজন তাল পাতার পাখা, দুর্বা, ধান, মিষ্টি, সুপারি, করম চা, ফুল, বেলপাতা, আম পল্লব, হলুদ দিয়ে রাঙানো সুতো ইত্যাদি।

জামাইষষ্ঠীর নিয়ম :

এইদিন ষষ্ঠী পুজো উপলক্ষে শাশুড়িরা স্নান করে ঘটে জল ভরে ঘটের উপর আম পল্লব স্থাপন করেন। তার সঙ্গে রাখেন তাল পাতার পাখা। এরপর ১০৮ টি দূর্বা দিয়ে বাঁধা আটি দিয়ে পুজোর উপকরণ সাজানো হয়। করমচা সহ ৫ অথবা ৭ থেকে ৯ রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার উপর সাজিয়ে রাখতে হয় শাশুড়িকে। তারপর সুতো হলুদে রাঙিয়ে তাতে ফুল বেল পাতা দিয়ে গিট বেঁধে দিয়ে মা ষষ্ঠীর পুজো করা হয়। বাড়ির কাছে মা ষষ্ঠীর থান থাকলে সেখানে গিয়েই শাশুড়িরা পুজো দিয়ে আসেন। এরপর ব্রতকথা পাঠ করতে হয় শাশুড়িকে। ব্রত কথা শেষ হওয়ার পরে সবাইকে ‘বাতাস’ করে, হাতে ষষ্ঠীর সুতো বেঁধে বাড়ির গৃহিণী উপবাস ভঙ্গ করেন।

এরপর ঘরে জামাই এলে সেই গাছা ঘটের জলে ভিজিয়ে তালপাতা দিয়ে বাতাস করে, জামাইকে বসিয়ে হাতে সুতো বেঁধে দেন শাশুড়ি। জামাইকে বাতাস করার সময়  ‘ষাট-ষাট-ষাট’ বলে আশীর্বাদও করতে হয় জামাইয়ের শাশুড়িকে। এই তিনবার ষাট ষাট ষাট বলার অর্থ হল, তার দীর্ঘায়ু কামনা করা। কথিত আছে- জামাইষষ্ঠীর আসল উদ্দেশ্য হল মাতৃত্ব, সন্তান ধারণ এবং বংশবৃদ্ধি। মেয়ে যাতে সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারে, তার জন্য মঙ্গল কামনা করা হয় এদিন।

জামাইষষ্ঠীর ব্রত কথা:

জামাই ষষ্ঠীর দিন ব্রত কথা পাঠ করতে হয় ঘরের গৃহিণীকে। শাস্ত্র মতে সেই ব্রত কথা হল-

এক পরিবারে দুই বউ ছিল। ছোট বউ ছিল খুব লোভী। বাড়ির মাছ বা অন্য কোনো ভালো খাবার রান্না হলে সে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজেই খেয়ে নিত, আর শাশুড়ির কাছে অভিযোগ করত যে, সব খাবার কালো বিড়ালে খেয়ে নিয়েছে। বিড়াল হল মা ষষ্ঠীর বাহন। তাই  কালো বিড়াল এই ঘটনা সম্পর্কে মা ষষ্ঠীর কাছে অভিযোগ জানায়, যা শুনে রেগে যান মা ষষ্ঠী। এরপর সেই ছোট বউয়ের সাত পুত্র ও এক কন্যাকে একে একে কেড়ে নেন মা ষষ্ঠী। ফলে স্বামী, শাশুড়ি ও শশুর বাড়ির অন্যান্যরা তাকে গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এদিকে স্বামী সন্তানদের নিয়ে সুখে ঘর করতে থাকে বড় বউ।

মনের দুঃখে বনে চলে যায় ছোট বউ। সেখানে অঝরে শুরু করেন কান্নাকাটি। এরপরে বৃদ্ধার ছদ্মবেশে ছোট বউয়ের কাছে এসে তার কান্নার কারণ জানতে চান মা ষষ্ঠী। তার দুঃখের কথা বলে মা ষষ্ঠীর কাছে ক্ষমা চায় ছোট বউ। এরপর মা ষষ্ঠী তার আসল রূপে এসে বলেন, তিনি ছোট বউকে ক্ষমা করবেন এবং তার সন্তানদের ফিরিয়ে দেবেন যদি সে নিষ্ঠা ভরে ষষ্ঠী পুজো করে। এরপরই ঘটা করে নিষ্ঠা ভরে মা ষষ্ঠীর পুজো করে ছোট বউ। মা ষষ্ঠীর কথা মত একে একে ছোট বউ ফিরে পায় তার সন্তানদের। এরপর থেকেই মা ষষ্ঠীর মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই হলো জামাইষষ্ঠী বা অরন্য ষষ্ঠীর ব্রতকথা।

এদিন এক এক জায়গায় এক এক রকম নিয়মে জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়। জৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে মহাপ্রভুর মন্দিরে জামাইষষ্ঠী পালিত হয় নবদ্বীপেও। এই মন্দিরের সেবায়েতরা হল বংশ পরম্পরায় নিমাইয়ের স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়ার ভাইদের উত্তর পুরুষ। প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর ধরে শ্রী চৈতন্যদেবের বিগ্রহকে জামাই হিসাবে আপ্যায়ন করা হয় জামাই ষষ্ঠীর দিন। এদিন তিনি শ্রীকৃষ্ণের অবতার নন বরং নিমাই অর্থাৎ তাদের সকলের আদরের জামাই। 

জামাই ষষ্ঠীর দিন স্থানীয় প্রবীণারা নিমাইকে ষাটের বাতাস দেয়। দেওয়া হয় নতুন পোশাক, সঙ্গে থাকে রাজসিক ভোজের আয়োজন। এদিন রুপোর রেকাবিতে করে মরসুমী ফল, রুপোর বাটিতে ক্ষীর, রুপোর গ্লাসে জল দিয়ে প্রথমে ঘুম ভাঙ্গানো হয় মহাপ্রভুর। তারপর থাকে চিঁড়ে, মুড়কি, দই আম কাঁঠাল ও মিষ্টির ফলাহার। মধ্যাহ্ন ভোজে থাকে নানা তরকারি, থোড়, বেগুন পাতুরি, ছানার ডালনা, লাউ, চাল কুমড়ো, পোস্ত দিয়ে রাঁধা সব রকম নিরামিষ পদ। দিবানিদ্রা দেওয়ার পর বিকেলে নিমাইয়ের উত্থান ভোগে থাকে ছানা আর মিষ্টি। অন্যদিকে, রাতে শয়নের আগে দেওয়া হয় গাওয়া ঘিতে ভাজা লুচির সঙ্গে মালপোয়া আর রাবড়ি। সবশেষে দেওয়া হয় সুগন্ধি দেওয়া খিলিপান। নবদ্বীপের মন্দিরে জামাইষষ্ঠীর ভোগের বিশেষত্ব হলো আম ক্ষীর। গাছপাকা আমের রস ক্ষীরের সাথে পাক দিয়ে নিমাইয়ের জন্য তৈরি করা হয় এই পদ। এর সঙ্গে সেবায়েত পরিবারের ঘরে তৈরি মিষ্টি ছাড়া জামাইরুপী নিমাইয়ের মিষ্টি মুখ অসম্পূর্ণ। এভাবেই বছরের পর বছর একই রীতিতে জামাইষষ্ঠী পালন করে আসা হয় নবদ্বীপে।


Salt Lake | রেলিংয়ে গাড়ির ধাক্কা, আগুনে ঝলসে মৃত ডেলিভারি বয়, পরিস্থিতি সামলাতে সল্টলেকে কাঁদানে শেল ছুঁড়লো পুলিশ
Stray Dog Case | 'বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে', দিল্লির পথকুকুরদের নিয়ে বিতর্কের মাঝে বড় মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির!
Noida | ১৫ মাসের দুধের শিশুকে কামড়, মুখে ঘুষি! নারকীয় নির্যাতন ডে কেয়ারের পরিচারিকার!
Bibhas Adhikari | ভুয়ো ‘ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’র অফিস খুলে বসেছিলেন! গ্রেপ্তার নিয়োগ কেলেঙ্কারির আসামী বিভাস অধিকারী
Maa Sarada | মা সরদার ১১৭তম জন্মবার্ষিকীতে পড়ুন সারদা দেবীর অমর বাণী এবং জীবনী!
১০০ টি দারুন সব আজব ফ্যাক্ট | Unique & Interesting Facts in Bangla
ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর জীবনী রচনা | Sarvepalli Radhakrishnan Biography, Quotes, Photos in Bengali