Dunki | বছর শেষে দর্শকদের 'উপহার'! প্রথমদিনেই ভক্তদের মন কাড়লো শাহরুখের 'ডাঙ্কি'! কেমন হলো 'বাদশাহ'র কম বাজেটের সিনেমা?
ডাঙ্কি সিনেমার ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো-তেই ভক্তদের উচ্ছাস। রাজকুমার হিরানির সঙ্গে প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করলেন বাদশাহ। পড়ুন ডাঙ্কি সিনেমার রিভিউ।
বছরের শুরুটা যেমন হয়েছিল 'কিং খান' তথা শাহরুখ খানকে নিয়ে, তেমনই বছরের শেষটাও 'বাদশাহ'কে দিয়েই। তবে বছর শুরুর 'পাঠান'-এ যে রূপে দেখা গিয়েছিলো শাহরুখকে তার ঠিক ভিন্ন রূপেই দেখা গেল তাঁকে ডাঙ্কি (Dunki)তে। বড় পর্যায়ে মুক্তি পেল রাজকুমার হিরানির ডাঙ্কি সিনেমা (Dunki Movie)। কিং খানকে নিয়ে বরাবরই 'পাগল' বলিউড প্রেমীরা। 'পাঠান', 'জওয়ান' এর মতোই ২০২৩ এ শাহরুখের তৃতীয় সীনেমা ডাঙ্কি নিয়েও দেখা গেল দর্শকদের একই উন্মাদনা।
ডাঙ্কিতে শাহরুখ খান (Dunki Shahrukh Khan) এর পাশাপাশি দেখা গিয়েছে বলিউডের আরও প্রথম সারির অভিনেতাদের। ডাঙ্কির কাস্ট (Cast of Dunki) হিসেবে দেখা গিয়েছে তাপসি পান্নু, ভিকি কৌশল, বোমান ইরানি, বিক্রম কোচ্চার-সহ আরও। উল্লেখ্য, রাজকুমার হিরানির সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলেন শাহরুখ। আর তাতেই আবারও বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বলিউডের 'বাদশাহ'! রোম্যান্টিক চরিত্র হোক কিংবা একেবারে মারকাটারি..সব কিছুতেই হিট তিনি। শাহরুখ খানের ভূমিকায় হরদয়াল সিং ধিলোন ওরফে হার্ডি বলেই দিয়েছেন, ‘সব চাঙ্গা হ্যায়।’ ডাঙ্কিতে শাহরুখ খান (Dunki Shahrukh Khan) এর চরিত্র অভিবাসনের বিষয়টি নিজে মোকাবিলা করেছেন। রাজকুমার হিরানি মানেই হাঁসতে হাঁসতে কান্না।
তারওপর শাহরুখের ম্যাজিক। ফলে আর আলাদা করে বলতে হবে না যে স্বাভাবিকভাবেই হাউস ফুল ডাঙ্কির প্রথম দিন। ডাঙ্কি সিনেমা (Dunki Movie) পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে। এই পাঁচ বন্ধু পঞ্জাব থেকে লন্ডন পৌঁছতে চায়। ভিটে ছাড়ার কারণ পাঁচ জনের পাঁচ রকম। অবশ্যই শাহরুখ ওরফে হার্ডি এই দলের লিডার। তবে সোজা পথে ভিসা নিয়ে যেতে পারছে না তারা। তাই হার্ডি ঠিক করে, ডাঙ্কি মেরেই লন্ডন পৌঁছবে তারা। ছবির নাম ‘ডাঙ্কি’ হওয়ায় বিভ্রান্তি ছিল অনেকের। তবে বিরতি কয়েক মিনিট আগে বোঝা যায়, বেআইনি পথে নিরাপত্তারক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে যে পথে হাজার হাজার মানুষ ভারত থেকে ইংল্যান্ডে ঢোকে, তাকেই বলে ‘ডাঙ্কি রুট’। রাজকুমারের যে কোনও ছবির মতোই এই ছবির গল্পও ঘটনাবহুল। তবে গল্পের নায়ক যে শাহরুখ খান, তা মাথায় রেখেই চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে।
কিছুটা কমেডি, কিছুটা ড্রামা, ডাঙ্কিতে পঞ্জাবের একটি গ্রাম থেকে চারটি এলাকার জার্নি তুলে ধরা হয়। তাপসী পান্নু, বিক্রম কোচার, অনিল গ্রোভার এবং ভিকি কৌশল-সহ ডাঙ্কির কাস্ট (Cast of Dunki) যাদের ইংল্যান্ডে বসতি স্থাপনের আকাঙ্খা, তাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে ভিসা পাওয়া। এরপরই একজন সৈনিকের আগমন ঘটে। যিনি ট্রেন থেকে নেমেই বুঝতে পারেন, কোথাও একটা তাঁর ভীষণ প্রয়োজন। তিনি তাদের আশ্বাস দেন যে এই স্বপ্নের জায়গায় নিয়ে যাবেন। সমুদ্র এবং মরুভূমির মধ্য দিয়ে একটি বিপদজ্জনক জার্নি দেখানো হয় সিনেমায়।
ছবি জুড়ে দর্শককে ধরে রাখার বেশির ভাগ কৃতিত্ব শাহরুখের হলেও ছবির পার্শ্বচরিত্রে ভিকি কৌশল, বিক্রম কোচার এবং বোমান ইরানিকে উপেক্ষা করা কঠিন। কয়েক মিনিটের উপস্থিতিতেই নিজের জাত প্রমাণ করে দিয়েছেন ভিকি। ঠিক যেমন ‘সঞ্জু’ তে ‘কমলি’ করেছিল। বিক্রমের কমিক টাইমিং বাকিদের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে। রাজকুমার বরাবরই বোমানকে বিশেষ চরিত্র দিয়ে থাকেন তাঁর ছবিতে। ফলে তাঁর কথা আলাদা করে মনে থাকবেই। তবে চরিত্রগুলো লেখায় খানিকটা যেন অবহেলা রয়ে গিয়েছে এ বার। কণিকা ধিলোঁ এবং অভিজাত যোশীর সঙ্গে যৌথ ভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন রাজকুমার। তবে ‘থ্রি ই়ডিয়টস’-এর ‘অল ইজ় ওয়েল’ বা ‘সঞ্জু’-এর ‘ঘাপাঘাপ’-এর মতো কোনও ‘হুক ওয়ার্ড’ এ বার তৈরি হয়নি ডাঙ্কিতে। তেমনই পরিচালকের বাকি ছবির মতো এই ছবিতে সঙ্গীত জোরের জায়গা নয়। অরিজিৎ সিংহের ‘লুটপুট গয়া’ ছাড়া ছবির বাকি গান সে ভাবে মনে দাগ কাটবে না।
কিছুটা খামতি থাকলেও সিনেমাটোগ্রাফি ভীষণই ভালো। বিশেষ করে শাহরুখ খানরা ভারত থেকে ডঙ্কি পদ্ধতিতে যখন লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন সেই সময় নদীর মধ্যে সিন বা ইরানের মরুভূমির দৃশ্য বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে। তুর্কি যাওয়ার পথে শাহরুখ তাপসীর ট্রেনের সিন মনে থাকবে। এমন টুকটাক অনেক দৃশ্য রয়েছে যা ছবি, গল্প বা অন্যান্য সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে বিশেষ ভাবে মনে দাগ কেটেছে। গল্পের বাঁধন বড়ই সুন্দর, কোথাও এতটুকু ঝিমিয়ে পড়তে দেননি পরিচালক। প্রথম দিকে শাহরুখের লালটুতে এন্ট্রি সিনে দর্শকরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে জাতীয় সঙ্গীত শুনে উঠে দাঁড়াবেন নাকি হাসবেন। আবার তেমনই শেষ দৃশ্যে যখন প্রাণভরে সকলে হাসতে শুরু করেছিলেন তখনই ইমোশনাল টুইস্ট মন খারাপ করে দেয়। আবার দেশ ছাড়ার আগে মাটি নিয়ে যাওয়া বা দেশে ফিরে খালি পায়ে হাঁটা সবটাই এক অনন্য মুহূর্ত তৈরি করেছিল। পাশাপাশি অভিনেতাদের দুর্দান্ত অভিনয় তো রয়েছেই। তাই সবটা মিলিয়ে দুর্দান্ত লাগল শাহরুখের এই ছবি।
উল্লেখ্য, এদিন ডাঙ্কি (Dunki)-র প্রথম শো ছিল Gaiety Galaxy-এ সকাল ৫:৫৫ মিনিটে। শাহরুখের অতন্ত পরিচিত একটি ফ্যান ক্লাবের শাহরুখ ভক্তরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’-এর সময়ও সকাল থেকেই এই ভাবে বুক করে রাখা হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ১০০০টি একচেটিয়া স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ডাঙ্কির বাজেট (Dunki Budget) মাত্র ৮৫ কোটি। গত ৭ বছরে যত সিনেমাতে দেখা গিয়েছে শাহরুখকে, তার মধ্যে ডাঙ্কি-র বাজেটই সবচেয়ে কম। ‘যব হ্যারি মেট সেজল’-এর বাজেট ছিল ৯০ কোটি। ‘রইস’ বানানো হয় ৯০ থেকে ৯৫ কোটিতে। ‘জিরো’-র বাজেট ছিল ২০০ কোটি, ‘পাঠান’-এর ২৪০ কোটি ও ‘জওয়ান’-এর ৩০০ কোটি। সেখানে দাঁড়িয়ে ডাঙ্কির বাজেট (Dunki Budget) মাত্র ৮৫ কোটি। তবে এর মধ্যে ছবির তারকাদের পারিশ্রমিক ধরা নেই। আসলে রাজকুমার হিরানি বরাবরই কম খরচেই কাজ শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ডাঙ্কি-র ক্ষেত্রেও সময় লেগেছে মাত্র ৭৫ দিন। যার মধ্যে শাহরুখ খান শ্যুটিং করেছিলেন ৬০ দিন। ফলে অনেকেরই প্রশ্ন বছর শেষে কিং খানের সিনেমা ডাঙ্কি কী ১০০ কোটির আয় ছুঁতে পারবে? সিনেমার মুক্তির প্রথম দিনেই ভক্তদের উচ্ছাস দেখে অনেকেই আশাবাদী।
- Related topics -
- বিনোদন
- ভারত
- বলিউড
- শাহরুখ খান
- তাপসী পান্নু
- ভিকি কৌশল
- সিনেমাহল