দেশ

Arogya Maitri Cube | ৭৫০ কেজি ওজনের গোটা হাসপাতাল এলো উড়ে! হলো চিকিৎসাও! বিশ্বের প্রথম এয়ারলিফ্ট পোর্টেবল হাসপাতাল বানিয়ে তাঁক লাগলো ভারত!

Arogya Maitri Cube | ৭৫০ কেজি ওজনের গোটা হাসপাতাল এলো উড়ে! হলো চিকিৎসাও! বিশ্বের প্রথম এয়ারলিফ্ট পোর্টেবল হাসপাতাল বানিয়ে তাঁক লাগলো ভারত!
Key Highlights

ভারতীয় বায়ুসেনার সহায়তায় স্থানান্তরযোগ্য হাসপাতালের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ‘ভীষ্ম’ প্রকল্পের অধীনে এই হাসপাতাল দেখে অভিভূত মাইক্রোসফ্‌টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে গেটস ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার ইচ্ছাপ্রকাশও করেন।

দুর্গম জায়গাতেও এবার নিমেষের মধ্যে পৌঁছে যাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা। গোটা হাসপাতালই উড়ে আসবে রোগীর কাছে। অবাক করা এই ঘটনা আসলেই সত্যি করে দেখালো ভারত। বিশ্বের প্রথম এয়ারলিফ্ট পোর্টেবল হাসপাতাল আরোগ্য মৈত্রী কিউব (arogya maitri cube) বানিয়েছে ভারত। ভারতীয় বায়ুসেনার সহায়তায় স্থানান্তরযোগ্য হাসপাতালের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সম্প্রতি বিমান বাহিনী দ্বারা এই পোর্টেবল হাসপাতাল (portable hospital) নিয়ে পরীক্ষাও চালানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই হাসপাতালের ওজন প্রায় ৭৫০ কেজি। সেই ওজনের হাসপাতালটি উড়িয়ে এনে ১৫০০ ফুট উপর থেকে প্যারাসুটে চাপিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয় আগরার মালপুরা (Malpura)এলাকায়। সেখানে চলে চিকিৎসাও।

বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল হাসপাতাল 'আরোগ্য মৈত্রী কিউব'!

গত ১৪ মে আগরার মালপুরা (Malpura) অঞ্চলে বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল হাসপাতাল (portable hospital) নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। বিমান বাহিনী দ্বারা আকাশপথে উড়ে আসে গোটা হাসপাতাল। তার পর প্যারাসুটে বেঁধে নামিয়েও দেওয়া হয় তা। এরপর এয়ারলিফটেড অত্যাধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাও চলে। এই স্থানান্তরযোগ্য হাসপাতাল  বায়ুসেনার এএন-৩২ বিমানে করে উড়িয়ে আনা হয় এবং ১৫০০ ফুট উপর থেকে প্যারাসুটে চাপিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, যে প্যারাসুটে চাপিয়ে ‘পোর্টেবল’ হাসপাতালটিকে স্থাপন করা হয়েছিল, তার নকশা করেছিল ‘এয়ার ডেলিভারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্ট্যাবলিশমেন্ট’ (Air Delivery Research and Development Establishment) বা এআরডিআই (ARDI)। 

বিশ্বের প্রথম স্থানান্তরযোগ্য এই হাসপাতালটির ওজন প্রায় ৭৫০ কেজি। এই ‘পোর্টেবল’ হাসপাতালকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরোগ্য মৈত্রী এড কিউব’। এতে তাঁবু এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত ৭২টি ছোট ছোট ‘কিউব’ বা খাঁচায় রয়েছে। ঘনকাকার আরোগ্য মৈত্রী কিউব (arogya maitri cube) এর প্রতিটি খাঁচার ওজন ১৫ কেজির নীচে। এই খাঁচার প্রত্যেক দিকের দৈর্ঘ্য ৩৮ সেন্টিমিটার। খাঁচাগুলিকে একত্র করে গোটা হাসপাতালের রূপ দিতে কমপক্ষে পাঁচ জন প্রশিক্ষিত লোকের প্রয়োজন। জানা যাচ্ছে, ৭২টি খাঁচার মধ্যে ৬০টিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম সজ্জিত থাকবে। বাকিগুলোতে থাকবে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর মতো পণ্য। এতে থাকবে ভেন্টিলেটর, সোলার প্যানেল-ভিত্তিক জেনারেটর, আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন, হাই-মাউন্টেড ওটি লাইট, অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচারের যন্ত্র, স্টেচার, পোর্টেবল ল্যাবরেটরি-সহ একাধিক সরঞ্জাম। ‘ভীষ্ম’ প্রকল্পের প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল তন্ময় রায় জানান, খাঁচাগুলিতে কী কী থাকবে তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এলাকায় চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তা না-ও লাগতে পারে। তাই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী চিকিৎসার সরঞ্জাম থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবর্তিত হবে। তবে এই হাসপাতালে ২০০ জন রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব।

বলা বাহুল্য, এই ‘পোর্টেবল’ হাসপাতালটি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ভীষ্ম' (Bhishma) প্রকল্পের অন্তর্গত। ‘ভীষ্ম (Bhishma)’ অর্থাৎ ‘ভারত হেলথ্ ইনিশিয়েটিভ ফর সহযোগ, হিত অ্যান্ড মৈত্রী’ প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বায়ুসেনার তরফে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুর্গম এলাকায় এই ‘পোর্টেবল’ হাসপাতাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এর সাহায্যে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে। এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতে উন্নত মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্যই এমন নকশা বানানো হয়েছে বলে দাবি এআরডিআই (ARDI) কর্তৃপক্ষর। বিশ্বের প্রথম পোর্টেবল হাসপাতাল বানিয়ে গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে ভারত। ‘ভীষ্ম’ প্রকল্পের অধীনে এই হাসপাতাল দেখে অভিভূত মাইক্রোসফ্‌টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও (Bill Gates)। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে গেটস ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার ইচ্ছাপ্রকাশও করেন। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, এই উদ্যোগে তাঁর ফাউন্ডেশন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে মিলে কাজ করতে চায়। সূত্রের খবর, এই ধরণের একটি হাসপাতাল তৈরি করতে খরচ হয় আনুমানিক দেড় কোটি টাকা। তিনটি দেশকে এই হাসপাতাল বিনামূল্যে দেবে ভারত সরকার। যদিও ভারত ইতিমধ্যেই মায়ানমারকে দুটি আরোগ্য মৈত্রী কিউব দান করেছে একটি শ্রীলঙ্কাকে অনুদানের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভীষ্ম প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল কেন্দ্রের তরফ থেকে। যার পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই উদ্যোগের জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গ্লোবাল সাউথ সামিটে, প্রধানমন্ত্রী মোদি 'আরোগ্য মৈত্রী' প্রকল্প ঘোষণা করেন যার অধীনে ভারত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত যে কোনো উন্নয়নশীল দেশকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরবরাহ করবে। মূলত ভারতে যেসব দুর্গম এলাকায় নূন্যতম স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলেনা, অসুখ করলে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে হয় সেই জায়গার জন্যই এই পোর্টেবল হাসপাতাল বানানোর উদ্যোগ।প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও এই হাসপাতালের সুবিধা মিলবে।