মনোরম 'পাত্রতু'( Picturesque Patratu ) ~ঝাড়খন্ডের স্বপ্নের উপত্যকা

Friday, January 21 2022, 4:40 pm
highlightKey Highlights

বন্যপ্রাণী এবং বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ ঝাড়খন্ড রাজ্যে রয়েছে এমন কিছু মনোমুগ্ধকর নির্মল স্থান এবং উন্মোচিত পর্যটন গন্তব্য যা প্রকৃতপক্ষে বর্ণনাতীত। সেরা পর্যটন গন্তব্যের মধ্যে, ঝাড়খণ্ডের নিকটেই অবস্থিত 'পাত্রাতু উপত্যকা' । আসুন এই স্থান সম্পর্কে বিশদে জেনে নেওয়া যাক


হ্রদ এবং জলপ্রপাতের রাজ্য হিসাবে জনপ্রিয়, ঝাড়খণ্ড, প্রায় দুই দশকের ব্যবধানের মধ্যে কিছু দর্শনীয় গন্তব্যস্থলের প্রবেশযোগ্যতা তৈরি করে পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কয়েকটি সেরা পর্যটন গন্তব্যের মধ্যে, ঝাড়খণ্ডের নিকটেই অবস্থিত 'পাত্রাতু উপত্যকা', রাজধানী শহর রাঁচির এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে । পাত্রাতুকে(সম্প্রদায় উন্নয়ন ব্লক) একটি সেন্সাস টাউন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি ঝাড়খন্ড রাজ্যের রামগড় মহকুমায় অবস্থিত। রাঁচি জেলার বাইরে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নয়নাভিরাম এই পাত্রাতু উপত্যকা। একদিকে পাত্রাতু বাঁধের ঝকঝকে জল এবং অন্য পাশে সবুজ গাছপালা ; স্বপ্ন দিয়ে পাত্রাতু উপত্যকা সত্যিই পর্যটকদের জন্য একটি দৃশ্যমান আনন্দ।

অবস্থান:

পাত্রাতু 23.67°N, 85.28°E এ অবস্থিত এবং এর গড় উচ্চতা 405 মিটার (1328 ফুট)। পাত্রাতু বাঁধটি ভারতীয় প্রকৌশলের জনক স্যার মোক্ষগুন্ডম বিশ্বেশ্বরায়ের পূর্বচিন্তায় স্থাপিত হয়েছে। রাঁচি থেকে প্রায় 40 কিমি দূরে অবস্থিত এই স্থানটিতে সড়কপথে এক ঘন্টারও কম সময়ে পৌঁছানো যায় । পাত্রাতুর উভয় পাশ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত এবং এই বাঁধটি একটি বিশাল জলাধার নিয়ে গঠিত। প্রকৃতি এখানে একটি রহস্যময় মনোরম পরিবেশ তৈরি করে।

Trending Updates

পাত্রাতু উপত্যকা:

চমৎকার পাত্রাতু উপত্যকা তার অপ্রতিরোধ্য এবং অতুলনীয় সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে রাঁচিতে অবস্থিত মনোরম স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচিত হয়। রাঁচি থেকে পিথাউরিয়া হয়ে ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে নেমে আসার সময় পাত্রাতু উপত্যকার এক ঝলক দেখতে পাওয়া যায় । পাত্রাতু উপত্যকা, রাঁচি-কাঙ্কে রোডে অবস্থিত যা রাঁচি রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় 35 কিলোমিটার দূরে । উপত্যকাটির চারপাশে পাহাড়, সবুজ এবং শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দ্বারা ঘেরা ও একটি সুন্দর পরিবেশ দ্বারা বেষ্টিত । পাত্রাতু জলাধারের স্ফটিক স্বচ্ছ জল এবং এর রাস্তাগুলির হেয়ারপিন মোড় সত্যিই আশ্চর্যজনক ।

উপত্যকার উপর থেকে রাস্তাগুলি একটি জিগ জ্যাগ প্যাটার্নে দৃশ্যমান হয়ে থাকে যা সততই নয়নাভিরাম । এই রাস্তাটি পাত্রাতু গ্রাম এবং পাত্রাতু বাঁধের সাথে সংযোগ স্থাপন করে৷ এই স্থানটি রাঁচি শহর থেকে প্রায় 40 মিনিটের পথ। উপত্যকার এই অনন্য সর্পিল রাস্তাটি বাইকার, অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী এবং যুবকদের মধ্যে বেশ বিখ্যাত। বিপজ্জনক অন্ধ বাঁক সহ সবুজ উপত্যকা পর্যটকদের হতচকিত করে দেয় এবং এর বৃত্তাকার ও আঁকাবাঁকা রাস্তা, চালকের দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য যথেষ্ট । রাজধানী শহর রাঁচি থেকে 28 কিলোমিটার দূরে ড্রাইভ করে গেলে পর্যটকরা কখনো শাল ,গামহার, সেগুন আচ্ছাদিত বন আবার কখনো বা এবড়োখেবড়ো পাহাড় এবং উপত্যকার প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে পারেন।

ঝাড়খণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান 'পাত্রাতু উপত্যকা'
ঝাড়খণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান 'পাত্রাতু উপত্যকা'

পাত্রাতু উপত্যকায় পৌঁছানোর জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করে যাত্রা শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যে রাস্তাটি উপত্যকার দিকে নিয়ে যায় তা আক্ষরিক অর্থেই 'পরিচ্ছন্ন এবং পরিষ্কার'। পথের বিভিন্ন চমৎকার দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে, উপত্যকার পাখির দৃশ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর বলে মনে করা হয়। ডাউনহিলে, বিখ্যাত পাত্রাতু পার্ক রয়েছে যা প্রত্যেক পর্যটকদের অবশ্যই পরিদর্শন করা উচিত কারণ এটি সত্যিই একটি খুব সুন্দর জায়গা যেখানে শিশুরা সম্পূর্ণরূপে নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারে এবং বিভিন্ন প্রকারে স্থানটির মজা নিতে পারে। এটি মূলত একটি বিনোদন পার্ক যেখানে বোটিং, বাঞ্জি জাম্পিং এর সুবিধা এবং অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে।

রাঁচি থেকে পাত্রাতু পর্যন্ত নৈসর্গিক ড্রাইভটি সত্যিই আনন্দদায়ক কারণ এটি প্রাকৃতিক আনন্দ দেয় যা প্রকৃতপক্ষে বিরল বলা চলে। উপত্যকার চমৎকার দৃশ্যগুলি ধরে রাখার জন্য আপনাকে যাত্রাকালে জালেবি ঘাটে থামতে হবে এবং যারা লং ড্রাইভ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি সত্যিই একটি আনন্দদায়ক যাত্রা।

পাত্রতু বাঁধ:

পাত্রাতু বাঁধ হল পাত্রাতু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (PTPS) প্রধান জলাধার। বাঁধটি মূলত রামগড় সেনানিবাস এলাকায় জল সরবরাহের জন্য এবং নলকারি নদীর জল সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। এলাকায় বাঁধের মোট স্টোরেজ ক্ষমতা 81 বর্গ মাইল। জায়গাটি ইদানীংকালে দুর্দান্ত ভাবে পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। পিথৌরিয়া-পাত্রাতু উপত্যকায় নির্মল সবুজ উপত্যকা, গাছ এবং ফুল দ্বারা আবৃত, পাত্রাতু বাঁধ যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য নিতান্তই একটি দর্শনীয় গন্তব্য। বাঁধটি রামগড় শহর থেকে প্রায় 30-35 কিলোমিটার দূরে রামগড় জেলায় অবস্থিত। দূষণ মুক্ত প্রকৃতিটি সম্পূর্ণ রূপে মানুষের ভিড় বর্জিত একটি এলাকা আর তার মধ্যে অন্যতম সেরা পর্যটন স্থান হল পাত্রাতু বাঁধ যেখানে দর্শনার্থীদের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে । কিন্তু পাত্রাতু বাঁধে আসার আগে পাত্রাতু বাঁধের মেরুদন্ড হিসেবে বিবেচিত পাত্রাতু ঘাটি এলাকা থেকে যেতে হবে।

পাত্রাতু বাঁধ
পাত্রাতু বাঁধ

পর্যটকরা রাস্তার মাধ্যমে রাঁচি থেকে প্রায় 40 কিমি , হাজারিবাগ থেকে 50 কিমি বা রামগড় থেকে 35 কিমি এবং পাত্রাতু শহর থেকে প্রায় 6 কিমি দূরে ভ্রমণ করে সহজেই পৌঁছাতে পারেন এবং বিখ্যাত পাত্রাতু বাঁধের সাথে সংযুক্ত হতে পারেন। বাঁধটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 408 মিটার উপরে অবস্থিত। বাঁধের পাশে একটি সার্কিট হাউস রয়েছে এবং একটি প্রাচীন মন্দির যা পঞ্চওয়াহিনী মন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরটি তার ধর্মীয় মূল্যবোধের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে পাহাড় থেকে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত হয় যা জলাধারে মিশে যায়। জলাধারে বোটিং , ভ্রমণকারীদের জন্য একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা এবং  পাড়ের সুন্দর সবুজাভ চমৎকার দৃশ্য অতি মনোরম ও প্রাণবন্ত । এটি একটি সুন্দর গভীর এবং প্রশস্ত বাঁধ যেখানে তাজা নীল এবং স্বচ্ছ জল রয়েছে৷ বাঁধে পৌঁছানোর আগে অনন্যসুন্দর , শান্তিপূর্ণ এবং শ্বাসরুদ্ধকর সংযোগকারী হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি চালানো সত্যিই একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। স্থানটি ভ্রমণ উৎসাহীদের জন্য একটি আদর্শ পিকনিক স্পট হিসাবে বিবেচিত হয়।

পরিবহন:

এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে:

নিকটতম বিমানবন্দর হল দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, ঝাড়সুগুদা, ইন্দোর, ভুবনেশ্বর, ব্যাঙ্গালোর এবং পাটনায় সরাসরি ফ্লাইট সহ বিরসা মুন্ডা বিমানবন্দর।

রেলপথের মাধ্যমে:

এখানকার একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন হল পাত্রাতু রেলওয়ে স্টেশন যার তিনটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। কলকাতার জন্য সরাসরি ট্রেনগুলি উপলভ্য। নতুন দিল্লি, পাটনা এবং ভারতের অনেক রাজ্য যেমন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মতো শহরগুলির জন্য, ডাউন ডিরেকশন ট্রেনগুলি উপলব্ধ।

রাস্তা দিয়ে:

পাত্রাতু রাজ্য হাইওয়ে 2 দ্বারা ঝাড়খণ্ডের সাথে রামগড়ের জেলা সদর এবং রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে সংযুক্ত। ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক শহরের জন্যও বাস পাওয়া যায়।

ভ্রমণের সেরা সময়:

এই স্থানটি ভ্রমণ করার সেরা সময় সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ধরা হয়। নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে পর্যটকদের জন্য এই স্থানটির প্রধান আকর্ষণ হল রঙিন পরিযায়ী পাখির দুর্দান্ত দৃশ্য ।


শেষের দু চার কথা :

ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি দেশের সেরা পর্যটন গন্তব্যস্থলগুলির মধ্যে একটি হল নিঃসন্দেহে পাত্রাতু উপত্যকা এবং বাঁধ৷ পাত্রতুতে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে । পর্যটনের সুবিধার্থে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করার জন্য ঝাড়খণ্ড পর্যটন কিছু সদর্থক উদ্যোগ নিয়েছে। পাত্রাতু লেক রিসর্ট, যা পাত্রাতু বাঁধের পাশে একটি শান্ত উপত্যকায় অবস্থিত, রাজ্য পর্যটন বিভাগ তৈরি করেছে। রিসর্টটি পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আকর্ষণের একটি কারণ ;এটি পর্যটকদের উপজাতীয় এবং বন্যজীবনের এক ঝলক দেখায় এবং ভ্রমণকারীদের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। তাই কেউ যদি কিছুদিনের জন্য শান্তিপূর্ণ ছুটি কাটাতে চান তবে প্রথম এবং প্রধান পছন্দ 'পাত্রতু' ছাড়া দ্বিতীয় কোনো স্থান ভাবা যায় না । পাত্রাতুতে ভ্রমণ করা আর প্রকৃতির প্রেমে নতুন করে পড়া ; উভয়ই সমার্থক। 




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File