World Oral Health Day | 'দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম' বুঝুন! জানুন কীভাবে নেবেন দাঁতের যত্ন? কীভাবেই বা দাঁত ঝকঝকে সাদা করবেন?
ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সারা বিশ্বে প্রায় ৪ বিলিয়ন মানুষ দাঁতের যত্ন নেন না। ফলে দাঁতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রতি বছর ২০সে মার্চ বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় বিশ্ব মৌখিক স্বাস্থ্য দিবস।
দাঁত -জিভ আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এই দাঁতের যত্ন নিয়ে থাকেন না অনেকেই। ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের (International Dental Association) মতে, সারা বিশ্বে প্রায় ৪ বিলিয়ন মানুষ দাঁতের যত্ন নেন না, যার ফলে দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণে কমবেশি গুরুতর রোগ ও সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। দাঁতের চিকিৎসক অর্থৎ ডেন্টিস্টরা বলে থাকেন, দাঁতের অপরিচ্ছন্নতা বা মৌখিক স্বাস্থ্যের যত্ন না নিলে বহু ধরনের সমস্যা ও রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতি বছর মৌখিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে প্রতি বছর ২০সে মার্চ পালন করা হয় বিশ্ব মৌখিক স্বাস্থ্য দিবস (Oral Health Day)।
বিশ্ব মৌখিক স্বাস্থ্য দিবস । World Oral Health Day :
বিশ্বব্যাপী মৌখিক স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং মৌখিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যাস গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২০সে মার্চ বিশ্ব মৌখিক স্বাস্থ্য দিবস (Oral Health Day)পালিত হয়।
বিশ্ব মৌখিক স্বাস্থ্য দিবসের সূচনা হয়েছিল 'এফডিআই' (FDI) দ্বারা। এটি প্রথম ২০১৩ সালে পালিত হয়েছিল। এই বিশেষ দিনে বিভিন্ন সংস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবী সংস্থাগুলি স্কুল, হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বিল্ডিংগুলিতে চেক-আপ ক্যাম্প, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, র্যালি, সেমিনার এবং ইত্যাদির আয়োজন করে থাকে।
মৌখিক স্বাস্থ্য । Oral Health :
অনেকেই আছেন যারা মুখের পরিচ্ছন্নতা বা যত্ন সেভাবে নেন না। যার ফলে নানারকমের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। ডেন্টিস্টরা বলে থাকেন, দাঁতের স্বাস্থ্যবিধির যত্ন না নেওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষয়, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, দাঁতে দাগ বা হলুদ হয়ে যাওয়া, মাড়ি দ্রুত ভেঙ্গে যাওয়া, দুর্বল ও আলগা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।পেরিওডেন্টাল রোগ, যেমন প্রদাহ বা আলসার এবং অন্যান্য পেরিওডন্টাল রোগের যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয় বা চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মুখ বা গলায় সংক্রমণ বা রোগ, ডিমেনশিয়া, মুখের কোনও অংশে ক্যানসার, হৃদরোগ, এন্ডোকার্ডাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় জটিলতা বা তাড়াতাড়ি প্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে 'দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম' দিতে হবে। দেখে নিন কীভাবে দাঁতের যত্ন নেবেন-
দু'বার ব্রাশ করুন :
দিনে অন্তত দু'বার ব্রাশ করা প্রয়োজন। কখনই গায়ের জোরে ঘষে ঘষে ব্রাশ করবেন না। এতে দাঁতের ক্ষতি হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ব্রাশ করা প্রয়োজন।
ব্রাশ করুন সঠিক উপায়ে :
সঠিকভাবে ব্রাশ না করলে সেটি ব্রাশ না করার মতোই ক্ষতিকারক। ৪৫-ডিগ্রি কোণে মৃদু বৃত্তাকার গতিতে ব্রাশ করুন। আপনার ব্রাশিং ৪ মিনিটের বেশি যেন না হয়। কারণ বেশি সময় ধরে ব্রাশ করলে এনামেলের ক্ষতি পারে। আপনি আপনার পছন্দ মতো জেল বা ভেষজ টুথপেস্ট (herbal toothpaste) ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটি নরম-ব্রিস্টেড ব্রাশ ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
ফ্লসিং :
ভারতে খুব বেশি মানুষ দাঁত ফ্লস করে না। ফ্লস একটি খুব পাতলা কর্ড যা দুটি দাঁতের মাঝখানে আটকে থাকা খাবারের কণা বা প্লাক অপসারণ করতে ব্যবহার করা হয়।
সঠিক টুথপেস্ট বেছে নিন :
জেল টুথপেস্ট, ভেষজ টুথপেস্ট (herbal toothpaste) এখন বাজারে নানারকমের টুথপেস্ট পাওয়া যায়। তবে আপনাকে নিশ্চিত বেছে নিতে হবে সঠিক টুথপেস্ট। খেয়াল রাখতে হবে যাতে অত্যধিক ঘর্ষণকারী না হয়। টুথপেস্ট বাছাই করার সময় ফ্লোরাইড একটি চমৎকার উপাদান। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেকেরই ফ্লোরাইডেড টুথপেস্টের প্রয়োজন হয় না। সঠিক পরামর্শের জন্য আপনার ডেন্টিস্টের সঙ্গে কথা বলুন।
খাবার খেয়ে মুখ ধোয়া প্রয়োজন :
যেকোনও খাবার খেয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে চকোলেট, মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে সঙ্গে সঙ্গেই মুখে ধুয়ে নেওয়া দরকার। এছাড়াও যেকোনও খাবার খেলে মুখ কুলকুচি করে পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। এমনকি চা খেলেও,বিশেষত যাঁরা চিনি দিয়ে চা খান তাঁরা চা খাওয়ার পরেও মুখ ধুয়ে নিন।
যত্ন নিতে হবে মাড়িরও :
দাঁতের পাশাপাশি মাড়ির যত্ন নেওয়াও প্রয়োজন। তবে টুথব্রাশ দিয়ে মাড়ি পরিষ্কার না করাই ভাল। ব্রাশ করা হয়ে গেলে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর আঙুল দিয়ে মাড়ি পরিষ্কার করে নিতে হবে।
পরিষ্কার রাখতে হবে জিভ :
দাঁত এবং মাড়ি পরিষ্কারের পাশাপাশি জিভ পরিষ্কার রাখাও দরকার। ভালভাবে মুখের ভিতরের সমস্ত অংশ পরিষ্কার না করলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। অকালেই দাঁত খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দাঁতের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন এবং সামান্যতম সমস্যা হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
হাইড্রেটেড থাকুন :
ঘন ঘন জল পান করলে আপনি আপনার দাঁতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে ফেলতে পারেন। অ্যাসিডের প্রভাবকে প্রত্যাখ্যান করতে খাবারের পরে জল পান করুন।
কীভাবে দাঁত সাদা করবেন?
দাঁত চকচকে বা সাদা করে তুলতে বাজার থেকে আনা দাঁত সাদা করার পাউডার (teeth whitening powder) বা দাঁত সাদা করার জেল (teeth whitening gel) বা দাঁত সাদা করার স্ট্রিপ্স (teeth whitening strips) এর ওপর ভরসা করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু বাজারজাত এই উপাদানে ব্লিচিং ও ও অন্যান্য কেমিক্যাল থাকে। যা দাঁতের উল্টে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই ক্ষতি এড়িয়ে দাঁত চকচকে করতে কাজে লাগাতে পারেন ঘরোয়া টোটকা। এর জন্য টুথ পেস্টের সঙ্গে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে দাঁত মাজুন। এতে দাঁত নিমেষে চকচকে হয়। রোজ দুবেলা এই মিশ্রণ দিয়ে দাঁত মাজতে পারেন। এতে সাদা ও ঝকঝকে হবে আপনার দাঁত।
এছাড়াও দাঁত সাদা করার পাউডার (teeth whitening powder) বা দাঁত সাদা করার জেল (teeth whitening gel) বা দাঁত সাদা করার স্ট্রিপ্স (teeth whitening strips) ব্যবহার না করে লেবু আর বেকিং সোডা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন। লেবু আর বেকিং সোডার মিশ্রণ দাঁতের হলুদ দাগ দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও নুন আর তেল দিয়ে দাঁত মাজা একটা প্রাচীন টোটকা। এই মিশ্রণে দাঁত মারাত্মক ভাবে পরিষ্কার হয়। তাই দাঁত ঝকঝকে করতে নুন আর তেল দিয়ে দাঁত মাজতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট (Global Oral Health Status Report) অনুসারে, সারা বিশ্বে ৩.৫ বিলিয়নেরও বেশি মানুষকে দাঁত ও মৌখিক স্বাস্থ্যের যত্ন না নেওয়ার কারণে নানান রোগে আক্রান্ত হন। বলা বাহুল্য, এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে, মৌখিক রোগে আক্রান্ত রোগীর আনুমানিক সংখ্যা ১ বিলিয়নেরও বেশি বেড়েছে।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- ঘরোয়া পদ্ধতি
- ঘরোয়া টোটকা