Chandra Shekhar Ghosh | ৫ হাজার থেকে ১৮ বিলিয়ন! দরিদ্র-গ্রামাঞ্চলের মানুষদের কথা ভেবেই 'বন্ধনে'র সূচনা করেন এই বাঙালি! জানুন চন্দ্র শেখর ঘোষের সাফল্যের কাহিনি!

Friday, February 23 2024, 6:10 am
highlightKey Highlights

দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্র শেখর ঘোষ। ছোটবেলায় বাবার মিষ্টির দোকানে কাজ করে ছুটতেন স্কুলে। ভেবেছিলেন আত্মহননের কথাও। পড়ুন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্র শেখর ঘোষের সাফল্যের কাহিনি সম্পর্কে।


'কষ্ট করলে কেষ্ট পাওয়া যায়'.. প্রবাদটা যে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি তা বরাবরই প্রমাণ করে থাকেন হার না মানা বেশ কয়েক 'যোদ্ধা'। পরিশ্রমের দ্বারা ভাগ্যের চাবিকাঠি এমনভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতার প্রথম শর্ত হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম। আর এই ইচ্ছে শক্তি ও পরিশ্রমকে সম্বল করেই মধ্যবিত্ত ছা পোষা বাঙালি ছেলে এই মুহূর্তে তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্ণধার। ইনি বন্ধন ব্যাঙ্কের (Bandhan Bank) ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও চন্দ্র শেখর ঘোষ (Chandra Shekhar Ghosh)। কার্যত তিনিই সেই ব্যাঙ্কের স্রষ্টা। স্কুলে যাওয়ার আগে বাবার মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন তিনি। এক সময়ে যে মানুষটা মাসে নয় নয় করে ৫ হাজার টাকা উপার্জন করতো সেই এক সময়ে ২৯০ কোটি টাকার নেট মূল্যের আর্থিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বন্ধন ব্যাঙ্কয়ের নেট মূল্য ১৮.৩৫ বিলিয়ন (২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। কীভাবে এই বাংলার ছেলে পেল এতো সাফল্য? চলুন জেনে নেওয়া যাক বন্ধন ব্যাঙ্কের মালিক (Bandhan Bank Owner) তথা চন্দ্র শেখর ঘোষের সাফল্যের কাহিনি (Success Story)।

দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্র শেখর ঘোষ
দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্র শেখর ঘোষ

চন্দ্রশেখর ঘোষের ইতিবৃত্তে দেশকালের গণ্ডি মুছে যায়। তাঁর জন্ম ত্রিপুরাতে। পড়াশোনায় মিশে গিয়েছে দুই বাংলা। চন্দ্রশেখর ঘোষের শেকড় পূর্ববঙ্গে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চন্দ্রশেখর ঘোষের বাবার মিষ্টির দোকান ছিলো। সেখানেই কাজ করতেন তিনি। দোকান পরিষ্কার করা, জলখাবার তৈরি করা সমস্ত কাজই করতেন তিনি। তারপর কোনোরকমে স্কুলে ছুটতেন। এরপর বাংলাদেশ থেকে পাড়ি দেন কাকার কাছে। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। আর সেই বছরই পরলোক গমন করেন তার বাবা। ভাগ্য তাঁর প্রতি খুব একটা সদয় থাকেনি কোনওকালেই। আয় নামমাত্র ছিল, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ জোগাড় করতে পারেননি, বেশি সুদে মহাজনের থেকে টাকা ধার নিতে হয়েছিল। তবু লড়ে গিয়েছেন দাঁতে দাঁত চেপে। শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন চন্দ্র শেখর ঘোষ (Chandra Shekhar Ghosh)। সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে নিজের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কথা প্রচার করেছেন। যাদের অধিকাংশই দরিদ্র ও গ্রামেগঞ্জে বসবাস করেন। আর এভাবেই শুরু ‘বন্ধন’।

 একটি আন্তর্জাতিক এনজিও-র কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন চন্দ্র শেখর ঘোষ এবং সেই কাজের সময় দারিদ্র, ক্ষুদার অমানবিক দিকটি নজরে আসেন তাঁর। দারিদ্র্য, অনাহার, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষগুলোকে দেখে তিনি বুঝতে পারেন শুধুমাত্র অনুদান দিয়েই এই মানুষ গুলোর সাহায্য করা যাবেনা। আয় বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়। এরপর ব্যাঙ্ক থেকে দু লক্ষ টাকা লোন নিয়ে তাঁর নিজস্ব এনজিও ‘বন্ধন’ শুরু করেন। বলা বাহুল্য, তাঁর  এই যাত্রায় বরাবর পাশে ছিলেন স্ত্রী নীলিমা । এই প্রসঙ্গে চন্দ্রশেখর বলেন, তাঁর কাছে দু’টিই পথ খোলা ছিল, বন্ধনকে সফল রূপ দেওয়া অথবা আত্মহত্যা করা।

সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে নিজের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কথা প্রচার করেছেন  চন্দ্র শেখর ঘোষ
সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে নিজের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের কথা প্রচার করেছেন  চন্দ্র শেখর ঘোষ

দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাঙ্কের অন্যতম!

২০০৬ সালে, চন্দ্রশেখর বন্ধনকে ‘বন্ধন ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড’ নাম দিয়ে একটি নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থায় (NBFC) পরিণত করেন। এরপর বহু ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে ২০০৭ সালে ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ৫০ টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্ধন ভারতে ১ম এবং বিশ্বে ২য় স্থান দখল করে। এরপর ২০১৪ সালে “ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক” বন্ধনকে এনজিও থেকে ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেয়। স্বাধীনতার পরে বন্ধন প্রথম সংস্থা যাকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক লাইসেন্স দিয়েছে। এরপর ২০১৪ সালের ২৩ সে ডিসেম্বর থেকে ব্যাঙ্ক হিসেবে বন্ধনের পথচলা শুরু। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি বন্ধন ব্যাঙ্কের মালিক (Bandhan Bank Owner) চন্দ্রশেখরকে। এক বছরের মধ্যেই ভারতের ২৭টি রাজ্যে ৬১৫টি শাখা এবং ২০৫টি এটিএম পরিসেবা চালু করে বন্ধন। আজ বন্ধনের গ্রাহক সংখ্যা ১.৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এবার এই সংস্থা বৃহত্তর ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে চলেছে। ভারতীয় বাজারে যখন বিশ্বের তাবড় তাবড় সংস্থা ব্যবসা খুলতে চাইছে, তখন মাত্র সাত বছর আগে শুরু হওয়া একটি সংস্থার এই জয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এমনটাই মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

২০১৫ সালে দেশের বহু তাবড় পুঁজিপতি গোষ্ঠীকে ছাপিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স আদায় করে নিয়েছিল ‘বন্ধন মাইক্রোফিনান্স’। দেশের প্রথম ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, যারা এই সাফল্য পেল। কলকাতায় বন্ধন ব্যাঙ্কের উদ্বোধনে এসেছিলেন খোদ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। উল্লেখ্য, বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যালয় (Bandhan Bank Head Office) অবস্থিত সল্টলেকে।

দেশের বহু তাবড় পুঁজিপতি গোষ্ঠীকে ছাপিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স আদায় করে নিয়েছিল ‘বন্ধন মাইক্রোফিনান্স’।
দেশের বহু তাবড় পুঁজিপতি গোষ্ঠীকে ছাপিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স আদায় করে নিয়েছিল ‘বন্ধন মাইক্রোফিনান্স’।

সম্প্রতি বন্ধন ব্যাঙ্ক এক দিনে তার ৫০টি শাখার দরজা খুলে দিয়েছে গ্রাহকদের জন্য। মূলত বিহার, গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশে হলেও নতুন এই ৫০টি শাখা ছড়িয়ে রয়েছে দেশের সব প্রান্তেই। নতুন এই শাখাগুলো ধরে সারা দেশে বন্ধন ব্যাঙ্কের এখন সব মিলিয়ে ১৪০০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। তবে নতুন এই শাখাগুলোর ক্রমবর্ধমান বিস্তার কেবলই বাণিজ্যিক স্বার্থ নয়, এর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের সুবিধার বিষয়টিও। দেশের অনেক প্রান্তেই মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পেতে সমস্যায় পড়তে হয়, এই উদ্যোগ সেই অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করতে বদ্ধপরিকর। ব্যাঙ্কের দায়বদ্ধতা যে কেবল গ্রাহকের প্রতি- সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই বন্ধন ব্যাঙ্কের এই জয়যাত্রা। এই কারণেই দেশের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাইরেও বন্ধন ব্যাঙ্ক তার শাখা বিস্তারের শপথ নিয়েছে। গ্রাহকের ভরসা যাতে ব্যর্থ না যায়, সেই লক্ষ্যে নতুন নতুন পণ্য এবং পরিষেবাও নিয়ে আসতে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান। দেশ এবং দেশবাসীর পাশে থাকার উদ্যোগে যে বিনিয়োগ করা হচ্ছে তা ভোলেন নি চন্দ্র শেখর ঘোষ।

চন্দ্র শেখর ঘোষ ও বন্ধন ব্যাঙ্কের মতো  বাংলায় অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী (Motivational Stories In Bengali) ও  সাফল্যের কাহিনি (Success Story) সম্পর্কে আরও পড়তে অবশ্যই চোখ রাখুন বেঙ্গলBYTE-এ।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File