Uric Acid | ঘরে ঘরে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা! জানুন সুস্থ্য হতে কী করবেন এবং ডায়েট চার্টে রাখবেন কোন কোন খাবার?

Tuesday, February 20 2024, 12:14 pm
highlightKey Highlights

কিছু প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করেই ইউরিক অ্যাসিডের প্রকোপ কমানো সম্ভব। এমনকী এই সকল ইউরিক অ্যাসিডের ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করলে ওষুধের উপর নির্ভরতাও কমবে।


বর্তমানে যেসব রোগ ঘরে ঘরে বাসা বেধেছে তার মধ্যে একটি হল ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা (Uric Acid)। শেষ কয়েক দশকে ইউরিক অ্যাসিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। এমনকী আজকাল কম বয়সেও অনেকে এই রোগের খপ্পরে পড়ছেন। তাই সকলকেই এই রোগ নিয়ে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এক্ষেত্রে এই রোগ হলে কিছু উপসর্গ দেখা যায়। তবে বলা বাহুল্য, পুরুষ ও মহিলাদের ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা (Normal uric acid level in female) ভিন্ন হয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা হলে জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে বদল আনা উচিত। ফলে দেখে নিন ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা কেন হয়? এর লক্ষণ কী? ইউরিক অ্যাসিডের ঘরোয়া প্রতিকার (Home remedies for uric acid) এবং ইউরিক অ্যাসিড ডায়েট চার্ট (Uric Acid Diet Chart) সম্পর্কে।

যেসব রোগ ঘরে ঘরে বাসা বেধেছে তার মধ্যে একটি হল ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা
যেসব রোগ ঘরে ঘরে বাসা বেধেছে তার মধ্যে একটি হল ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা

ইউরিক অ্যাসিড কী? । What Is Uric Acid?

Trending Updates

ইউরিক অ্যাসিড হল শরীরের বর্জ্য পদার্থ যা রক্তে পাওয়া যায়। এটি উত্পাদিত হয় যখন শরীর প্রক্রিয়াকরণ করে এবং পিউরিন নামে পরিচিত রাসায়নিকগুলি ভেঙে দেয়। ইউরিক অ্যাসিড রক্তে দ্রবীভূত হয়, কিডনির মধ্য দিয়ে যায়, প্রস্রাবের সাথে মিশে যায় এবং শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যদি ইউরিক অ্যাসিড শরীরে থেকে যায়, তবে এর ঘনত্ব হাইপারইউরিসেমিয়া (Hyperuricemia) নামক অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং অঙ্গগুলির ক্ষতি করার সম্ভাবনা রাখে।

ইউরিক অ্যাসিডের কারণ । Causes of Uric Acid :

শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশ কিছু কারণে বাড়তে পারে। খাদ্য এবং পরিবেশগত কারণ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বিপাকীয় সিন্ড্রোম, অতিরিক্ত মদ্যপান, কিছু ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ, এমন খাবার এবং পানীয় যেগুলিতে পিউরিন থাকে বা লাল মাংস, কিছু সামুদ্রিক খাবার পিউরিনের মাত্রা বাড়াতে পারে। সেইসাথে ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ খাবার যা প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়গুলিতে পাওয়া যায়, তা ইউরিকের উচ্চ ঘনত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া কিছু রোগের কারণেও অনেক সময়ে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়, যেমন-  কিডনি রোগের ক্ষেত্রে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করার জন্য কিডনি দায়ী। এক্ষেত্রে কিডনি রোগ, পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে ইউরিক অ্যাসিড সহ বর্জ্য পণ্যের অনুপযুক্ত নির্মূল হয়। ফলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি, চিকিত্সা, ক্যান্সার এবং সুস্থ কোষ উভয়কেই মেরে ফেলতে পারে, প্রক্রিয়ায় পিউরিন মুক্ত করে এবং এটি ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।

খাদ্য এবং পরিবেশগত কারণ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মদ্যপান ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে
খাদ্য এবং পরিবেশগত কারণ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মদ্যপান ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে

পুরুষ ও মহিলার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা । Uric Acid Levels in Males and Females :

ইউরিক অ্যাসিড রক্তের একটি স্বাভাবিক উপাদান, তাই সবসময়ই শরীরে কিছু পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড অবস্থিত থাকে। তবে পুরুষ ও মহিলাদের ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা (Normal uric acid level in female) ভিন্ন হয়।ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা মিলিগ্রাম (mg) প্রতি ডেসিলিটার (dL) এ পরিমাপ করা হয়। স্বাস্থ্যকর এবং অস্বাভাবিক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা হয়।

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পুরুষদের ক্ষেত্রে-

  • সাধারণ : ২.৫-৭ মিগ্রা/ডিএল    
  • বেশি :  ৭ মিগ্রা/ডিএল এর বেশি
  • কম : ২ মিলিগ্রাম / ডিএল এর কম

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা মহিলাদের ক্ষেত্রে -

  • সাধারণ : 1.5-6 মিগ্রা/ডিএল
  • বেশি : ৬ মিগ্রা/ডিএল এর বেশি
  • কম : ১.৫ মিলিগ্রাম / ডিএল এর কম
পুরুষ ও মহিলাদের ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা ভিন্ন হয়
পুরুষ ও মহিলাদের ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা ভিন্ন হয়

ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ । Symptoms of High Uric Acid Levels. :

স্বাভাবিকের তুলনায় ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ বা কম ঘনত্বের একজন ব্যক্তির কোনো উপসর্গ দেখা দিতে পারে বা নাও হতে পারে। কখনও কখনও লক্ষণগুলি একটি উল্লেখযোগ্য সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে এবং ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা ধারাবাহিকভাবে অতিক্রম করার পরে প্রকাশ পেতে পারে। এক্ষেত্রে জয়েন্টগুলোতে বেদনাদায়কব ব্যথা বা ফোলাভাব,জয়েন্টের চারপাশে বিবর্ণতা বা চকচকে ত্বক, জয়েন্টগুলি স্পর্শে উষ্ণ অনুভব, পিঠের দুপাশে ব্যথা, ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া, বমি বমি ভাবের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের চিকিৎসা । Treatment of High Levels of Uric Acid :

প্রাথমিক উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড উপসর্গের ক্ষেত্রে, চিকিৎসা কম পিউরিন ডায়েট অনুসরণ করতে পারেন। এটি পিউরিনের ঘনত্ব কমাতে সাহায্য করে, এইভাবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করে। ডাক্তার কিছু খাওয়ার সীমাবদ্ধ করার পরামর্শ দিতে পারেন। গাউট দ্বারা সৃষ্ট প্রদাহ কমানোর জন্য ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs) সুপারিশ করা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট ওষুধগুলিও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

  ইউরিক অ্যাসিডের ঘরোয়া প্রতিকার । Home Remedies for Uric Acid :

কিছু প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করেই ইউরিক অ্যাসিডের প্রকোপ কমানো সম্ভব হবে। এমনকী এই সকল ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করলে ওষুধের উপর নির্ভরতাও কমবে। এক্ষেত্রে যে বিষয়ের দিকে নজর রাখবেন-

  • ইউরিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করতেই হবে। দেহে জলের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হলেই অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার জলপান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
  • ওজনকে স্বাভাবিকের গণ্ডিতে ধরে রাখতে পারলে অনায়াসে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যাকে অনায়াসে বাগে আনা যাবে।
  • ইউরিক অ্যাসিডকে বিপদ সীমার উপর নিয়ে পারে মদ্যপানের অভ্যাস। ফলে সুস্থ্য থাকতে মদ্যপান ছাড়তে হবে।
  •  কোল্ড ড্রিংকের মতো ‘সুগারি’ পানীয় খেলেও সমস্যা বাড়তে পারে। তাই যতই গরমে নাজেহাল হন না কেন, ভুলেও ঠান্ডা পানীয় গলায় ঢালা যাবে না।
  • কফিতে থাকা ক্যাফিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের যুগলবন্দিতে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকতে বাধ্য হয়।
  • ভিটামিন সি যুক্ত খাবার পাতে রাখতে পারলেই ইউরিক অ্যাসিডের মতো সমস্যাকে হেলায় হারিয়ে দেওয়া যায়। তাই প্রতিদিন নিজের পছন্দ মতো একটা করে লেবু খাওয়া মাস্ট। এছাড়া আপেল, পেয়ারা এবং আমলকীর মতো ভিটামিন সি যুক্ত ফল ইউরিক অ্যাসিড ডায়েট চার্ট (Uric Acid Diet Chart) এ রাখলেও উপকার পাওয়া যাবে।
কিছু প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করেই ইউরিক অ্যাসিডের প্রকোপ কমানো সম্ভব 
কিছু প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করেই ইউরিক অ্যাসিডের প্রকোপ কমানো সম্ভব 

চিকিৎসকের মতে, প্রতিদিনের তালিকা থেকে কয়েকটি খাবার বাদ দিলে যে ইউরিক অ্যাসিড কমে যাবে তেমনটা কিন্তু নয়। কয়েকটি ঘরোয়া উপায়েই ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার জল খেতে হবে। পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ব্যায়াম করতেই হবে অবশ্যই। এক্ষেত্রে দিনে অন্ততপক্ষে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম হল মাস্ট। তবেই সুস্থ্য থাকতে পারবেন। খাওয়ার পাশাপাশি বিপাক ভালো রাখতে চাইলে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ঘুমের সময়ও হওয়া উচিত ৭ ঘণ্টার বেশি। তবেই আপনি ভালো থাকতে পারবেন।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File